হাজাছড়া ঝর্ণা, যাকে স্থানীয় আদিবাসীরা চিত জুরানি থাংঝাং ঝর্ণা নামে ডাকেন, প্রকৃতির এক অসাধারণ উপহার। পার্বত্য রাঙ্গামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলার সাজেক ইউনিয়নের বাঘাইহাট এলাকায় অবস্থিত এই ঝর্ণা, খাগড়াছড়ি থেকে সহজেই দর্শন করা যায়। ঝর্ণার সৌন্দর্য উপভোগ করতে দিঘীনালা থেকে যাত্রা শুরু করলে পথে মাইনী নদীর স্নিগ্ধ জলধারা, রাস্তার দু’পাশে আদিবাসীদের গ্রাম এবং জুম চাষের সবুজ ক্ষেত দেখে মুগ্ধ হতে হয়। ১০ নম্বর রাস্তা থেকে মাত্র ১৫ মিনিট ঝিরিপথ ধরে হেঁটে হাজাছড়া ঝর্ণায় পৌঁছানো যায়। সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের পর পর্যটকেরা সাধারণত এই ঝর্ণার টানে আসেন। ঝর্ণার ঠাণ্ডা জলে গা ভেজানোর অনুভূতি যে কোনো পর্যটকের হৃদয়ে প্রশান্তি এনে দেয়, আর এটাই হাজাছড়ার প্রকৃত সৌন্দর্য।
হাজাছড়া ঝর্ণা সারা বছরই তার সৌন্দর্যের কিছুটা রূপ ধরে রাখে, তবে বর্ষার সময় এই ঝর্ণা যেন প্রাণ ফিরে পায়। শীতকালে এর জলপ্রবাহ কিছুটা কমে আসে, কিন্তু বর্ষার পরিপূর্ণতায় ঝর্ণাটি তার স্বরূপে উদ্ভাসিত হয়। তাই ঝর্ণার আসল সৌন্দর্য দেখতে চাইলে বর্ষার পর কিংবা শীতের ঠিক আগে সময়টি সবচেয়ে উপযুক্ত। এই সময়ের প্রবল জলধারায় হাজাছড়া ঝর্ণার সৌন্দর্য হৃদয়গ্রাহী হয়ে ওঠে, যা ভ্রমণপিপাসুদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়।
যাবেন কিভাবে হাজাছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে
বাংলাদেশের যেকোন প্রান্ত থেকে হাজাছড়া ঝর্ণায় ভ্রমণের জন্য প্রথমেই খাগড়াছড়ি পৌঁছাতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ, ফকিরাপুল, কলাবাগান কিংবা কমলাপুর থেকে সরাসরি খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাস সার্ভিস চলাচল করে। বাসের ধরন অনুযায়ী ভাড়া ৭৫০ থেকে ১৬০০ টাকার মধ্যে পরিবর্তিত হয়। জনপ্রিয় বাসগুলোর মধ্যে রয়েছে শান্তি পরিবহন, এস আলম, সৌদিয়া এবং শ্যামলী পরিবহন। ছুটির দিনে ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে আগেভাগেই টিকেট কেটে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ হবে, কারণ শেষ মুহূর্তে টিকেটের জন্য ঝামেলা হতে পারে।
চট্টগ্রাম থেকে যারা যেতে চান, তাদের জন্য কদমতলী থেকে বিআরটিসি এসি বাস প্রতিদিন খাগড়াছড়ির উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়, যার ভাড়া ২০০ টাকা। এছাড়া অক্সিজেন মোড় থেকে প্রতি ঘণ্টায় শান্তি পরিবহন চলাচল করে, যার ভাড়া ১৯০ টাকা। চট্টগ্রাম থেকে খাগড়াছড়ি যেতে প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে। খাগড়াছড়িতে পৌঁছে মটরসাইকেল, বাস বা চাঁদের গাড়িতে চড়ে দিঘীনালার দিকে যাত্রা করতে হবে।
আপনি চাইলে ঢাকার শান্তি পরিবহনের বাসে সরাসরি দিঘীনালায়ও যেতে পারেন। দিঘীনালা পৌঁছানোর পর মোটরসাইকেল বা চাঁদের গাড়িতে বাঘাইহাটের আগে ১০ নম্বর পয়েন্টে নামতে হবে। সেখান থেকে ১৫ মিনিট ঝিরিপথ ধরে হাঁটলেই হাজাছড়া ঝর্ণার মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের সামনে নিজেকে আবিষ্কার করবেন।
খাবেন কোথায় হাজাছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে
হাজাছড়া ঝর্ণার আশেপাশে খাবারের তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই, তাই ঝর্ণায় যাওয়ার সময় সাথে শুকনো খাবার এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি নিয়ে যাওয়া উত্তম। ঝর্ণা ভ্রমণ শেষে খাগড়াছড়ি শহরে ফিরে খাওয়ার ইচ্ছা থাকলে, শহরের পানখাই পাড়ায় অবস্থিত সিস্টেম রেস্টুরেন্টে খেতে পারেন। এটি খাগড়াছড়ির ঐতিহ্যবাহী খাবারের জন্য বিখ্যাত, যেখানে আপনি স্থানীয় সুস্বাদু খাবার উপভোগ করতে পারবেন। যোগাযোগের জন্য রেস্টুরেন্টের নম্বর: 0371-62634, 01556-773493, 01732-906322।
যদি হাতে একটু সময় থাকে, তবে কাছেই নিউজিল্যান্ড পাড়া থেকেও ঘুরে আসতে পারেন, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের মাঝে সময় কাটানো যাবে।
থাকবেন কোথায় হাজাছড়া ঝর্ণা ভ্রমণে
হাজাছড়া ঝর্ণা দেখে দিনের শেষে যদি রাত্রিযাপনের প্রয়োজন হয়, আপনাকে খাগড়াছড়িতে থাকতে হবে। খাগড়াছড়িতে পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু মানসম্মত আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেখানে আপনি আরামদায়কভাবে রাত কাটাতে পারেন। এদের মধ্যে অন্যতম হলো:
- পর্যটন মোটেল (ফোন: 0371-62084, 0371-62085), যেখানে সাশ্রয়ী মূল্যে ভালো সেবা পাওয়া যায়।
- হোটেল শৌল্য সুবর্ণ (ফোন: 0371-61436), যা শহরের অন্যতম জনপ্রিয় একটি হোটেল।
- জিরান হোটেল (ফোন: 0371-61071) ও হোটেল লিবয়ত (ফোন: 0371-61220), উভয়ই পরিচ্ছন্ন ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ থাকার সুযোগ প্রদান করে।
- এছাড়াও চৌধুরী বাডিং (ফোন: 0371-61176), থ্রি স্টার (ফোন: 0371-62057), ফোর স্টার (ফোন: 0371-62240), উপহার (ফোন: 0371-61980) এবং হোটেল নিলয় (ফোন: 01556-772206) উল্লেখযোগ্য।
প্রতিটি হোটেলেই ভালো থাকার ব্যবস্থা রয়েছে, তাই আপনার বাজেট ও পছন্দ অনুযায়ী যেকোনো একটি বেছে নিতে পারেন।
ভ্রমণ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করুন এবং আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।