রাঙ্গামাটি জেলার বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ওড়াছড়িতে অবস্থিত ধুপপানি ঝর্ণা (Dhuppani Waterfall) প্রকৃতির এক অপূর্ব নিদর্শন। ২০০০ সালের দিকে এখানে এক বৌদ্ধ ধ্যান সন্ন্যাসী ধ্যান শুরু করেন, যার মাধ্যমে এই ঝর্ণাটি স্থানীয় জনগণের মধ্যে পরিচিতি লাভ করে।
স্থানীয় ভাষায় “তঞ্চঙ্গ্যা” নামে পরিচিত ধুপপানি ঝর্ণার মানে সাদা পানির ঝর্ণা, যা প্রায় ১৫০ মিটার উচ্চতা থেকে নীচে পড়ছে। এই ঝর্ণার চারপাশে বিভিন্ন বন্য প্রাণী যেমন হরিণ, বুনো শুকর, বনবিড়াল এবং ভাল্লুকের অবস্থান রয়েছে, যা স্থানটিকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
মনে হয়, প্রায় ২ কিলোমিটার দূর থেকে ঝর্ণার পানি আছড়ে পড়ার ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায়, যা এর সৌন্দর্য ও বিশালতা প্রতিফলিত করে। এই ঝর্ণা প্রকৃতি প্রেমীদের জন্য একটি আদর্শ ভ্রমণস্থল, যেখানে আপনি শান্ত পরিবেশে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারবেন।
যাবেন কিভাবে
ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই আসার অনেক বাস সার্ভিস রয়েছে। সুবিধাজনক সময়ে পছন্দের বাসে কাপ্তাই এসে লঞ্চঘাট থেকে ট্রলার দিয়ে বিলাইছড়ি যেতে ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট সময় লাগে। ট্রলার রিজার্ভ নিলে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা লাগবে। আর লোকাল ট্রলারে করে যেতে চাইলে কাপ্তাইঘাট থেকে সকাল ৮ টা ৩০ মিনিট, দুপুর ১ টা এবং ১ টা ৩০ মিনিটে ছেড়ে যাওয়া ট্রলারে জনপ্রতি ৫৫ টাকা ভাড়ায় যেতে পারবেন। বিলাইছড়ি বাজারে চাইলে খাবার খেয়ে নিতে পারেন। বিলাইছড়ি থেকে এবার ২ ঘন্টা দূরত্বের উলুছড়ি যেতে হবে। উলুছড়ি থেকে বাধ্যতামূলক একজন গাইড নিয়ে নিন, আলোচনা সাপেক্ষ্যে গাইড ফি ৫০০ টাকা লাগতে পারে। উলুছড়ি থেকে কোষা নৌকা করে পাহাড়ি ঢলের পানি পাড় হয়ে পায়ে হেটে ধুপপানি পাড়ায় পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট ট্রেকিং করতে হবে। ট্রেকিং করতে খালি পায়ে যাবেন কিংবা ভাল মানের ট্রেকিং সু পড়ে নিবেন। ধুপপানি পাড়া থেকে ধুপপানি ঝর্নায় পৌঁছাতে ৩০ মিনিটের মত লাগে। ধুপপানি পাড়া থেকে পাহাড়ি ঢালের প্রায় ২০০ মিটার নিচে ধূপপানি ঝর্ণা অবস্থিত।
থাকবেন কোথায়
ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটির কাপ্তাই অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন বাস সার্ভিস উপলব্ধ। আপনার সুবিধার সময় অনুযায়ী পছন্দের বাসে চড়ে লঞ্চঘাটে পৌঁছে ট্রলার নিয়ে বিলাইছড়ি যেতে ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট সময় লাগবে। ট্রলার রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা, কিন্তু আপনি যদি লোকাল ট্রলারে যেতে চান, তাহলে সকাল ৮:৩০, দুপুর ১:০০ এবং ১:৩০ টার ট্রলারে জনপ্রতি ৫৫ টাকায় যেতে পারেন।
বিলাইছড়ি বাজারে গিয়ে খাবারের ব্যবস্থা করতে পারেন। তারপর আপনাকে উলুছড়ি যেতে হবে, যা বিলাইছড়ি থেকে ২ ঘণ্টা দূরত্বে অবস্থিত। উলুছড়ি থেকে বাধ্যতামূলকভাবে একজন গাইড নিতে হবে; গাইড ফি আলোচনা সাপেক্ষে ৫০০ টাকা হতে পারে।
উলুছড়ি থেকে কোষা নৌকা নিয়ে পাহাড়ি ঢল পাড় হয়ে ধুপপানি পাড়ায় পৌঁছাতে প্রায় ২ ঘণ্টা ৩০ মিনিট ট্রেকিং করতে হবে। ট্রেকিংয়ের জন্য খালি পায়ে চলা অথবা ভালো মানের ট্রেকিং শু পরে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। ধুপপানি পাড়া থেকে ঝর্ণায় পৌঁছাতে আরও ৩০ মিনিট লাগবে, যেখানে ধুপপানি ঝর্ণা পাহাড়ি ঢালের প্রায় ২০০ মিটার নিচে অবস্থিত।
থাকবেন কোথায়
বিলাইছড়িতে রাত্রী যাপনের জন্য সুবিধা রয়েছে। যদি আপনি ট্রলার রিজার্ভ করেন, তাহলে হাসপাতাল ঘাটে নেমে নিরিবিলি বোর্ডিংয়ে উঠতে পারবেন। এখানে সিঙ্গেল এবং ডাবল বেডের রুমের ভাড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। থাকাকালীন কোন প্রয়োজনে নিরিবিলি বোর্ডিংয়ের প্রোপাইটর সঞ্জয় তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, তার মোবাইল নম্বর: 01827-722905 অথবা 01553-128673।
যদি আপনি রাত কাটানোর পরিকল্পনা না করেন, তবে কাপ্তাই থেকে সকাল ৬টার মধ্যে বিলাইছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা ভুলবেন না।বিলাইছড়িতে রাত্রী যাপনের জন্য সুবিধা রয়েছে। যদি আপনি ট্রলার রিজার্ভ করেন, তাহলে হাসপাতাল ঘাটে নেমে নিরিবিলি বোর্ডিংয়ে উঠতে পারবেন। এখানে সিঙ্গেল এবং ডাবল বেডের রুমের ভাড়া ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে। থাকাকালীন কোন প্রয়োজনে নিরিবিলি বোর্ডিংয়ের প্রোপাইটর সঞ্জয় তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন, তার মোবাইল নম্বর: 01827-722905 অথবা 01553-128673।
যদি আপনি রাত কাটানোর পরিকল্পনা না করেন, তবে কাপ্তাই থেকে সকাল ৬টার মধ্যে বিলাইছড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার কথা ভুলবেন না।
বিলাইছড়ি বাজারে খাবারের জন্য বেশ কয়েকটি হোটেল রয়েছে, যেখানে আপনি ভালো খাবার উপভোগ করতে পারবেন। এর মধ্যে “বকুলের দোকান” এবং “ভাতঘর” বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই দুইটি হোটেলে আপনি সাশ্রয়ী দামে মানসম্মত খাবার পাবেন, যা আপনার ভ্রমণের জন্য একটি উপযুক্ত পছন্দ।
ধুপপানি ঝর্ণা ভ্রমণের জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ অনুসরণ করুন। প্রথমত, ট্রেকিংয়ের জন্য ভালো গ্রিপযুক্ত জুতা পরিধান করুন, যা আপনাকে পিচ্ছিল পাথর ও উঁচুনিচু জায়গায় সঠিকভাবে চলতে সাহায্য করবে। ঝর্ণার দিকে যাওয়ার সময় কিছু শুকনো খাবার সঙ্গে নিয়ে যান, কারণ পথে খাবারের সংস্থান সীমিত হতে পারে।
সাবধানতা অবলম্বন করুন এবং স্থানীয় মানুষের প্রতি ভদ্র ও মার্জিত আচরণ করুন। ঝর্ণার এলাকায় হৈ হল্লোর করা থেকে বিরত থাকুন, কারণ এটি পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। পাথুরে জায়গাগুলোতে সাবধানে চলাফেরা করুন, কারণ সেগুলো পিচ্ছিল হতে পারে।
এছাড়া, বিলাইছড়ি যাওয়ার পথে আলিখিয়াং সেনাবাহিনীর ক্যাম্পে পরিচয়পত্র প্রদর্শন বাধ্যতামূলক, তাই জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম নিবন্ধনের সনদ, স্টুডেন্ট আইডি কার্ড অথবা কোনো প্রতিষ্ঠানের ফটো আইডি কার্ড সঙ্গে রাখা উচিৎ। এই পদক্ষেপগুলো আপনার ভ্রমণকে নিরাপদ ও সুন্দর করবে।
রাঙ্গামাটি জেলা প্রকৃতির অঢেল সৌন্দর্য ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ। এখানে বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে, যা পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। কাপ্তাই লেক, এই বিশাল জলাশয়ের নীল জল ও চারপাশের পাহাড়ের দৃশ্য দর্শকদের মুগ্ধ করে। ঝুলন্ত ব্রিজ, যা রাঙ্গামাটির অপার সৌন্দর্যের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, ভ্রমণকারীদের জন্য এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা প্রদান করে। সাজেক ভ্যালি, পাহাড়ি অঞ্চলগুলির মধ্যে অবস্থিত একটি মনোমুগ্ধকর স্থান, যেখানে সূর্যাস্তের দৃশ্য অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। শুভলং ঝর্ণা, বর্ষাকালে বিপুল জলধারার ঝর্ণাধারা দেখে পর্যটকরা আকৃষ্ট হন। এই স্থানগুলো রাঙ্গামাটি জেলার ভ্রমণকে আরও রঙিন এবং স্মরণীয় করে তোলে।
ভ্রমণ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করুন এবং আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।