নিঝুম দ্বীপ, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার অর্ন্তগত একটি ছোট্ট ও সুন্দর দ্বীপ, যার আয়তন প্রায় ১৪,০৫০ একর। এই দ্বীপটি মূলত কামলার চর, বল্লার চর, চর ওসমান এবং চর মুরি নামের চারটি চরকে নিয়ে গঠিত। ২০০১ সালের ৮ এপ্রিল, বাংলাদেশ সরকার নিঝুম দ্বীপকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করে, পূর্বে এটি পরিচিত ছিল চর-ওসমান নামেই। স্থানীয় এক বাসিন্দা, ওসমান, মহিষের বাথান নিয়ে প্রথম এই দ্বীপে বসতি গড়েছিলেন, যার ফলে এর নামকরণ হয়। পরে, হাতিয়ার সাংসদ আমিরুল ইসলাম কালাম এই নাম পরিবর্তন করে নিঝুম দ্বীপ রাখেন।
১৯৭০ সালের আগ পর্যন্ত লোকবসতি থেকে মুক্ত থাকা নিঝুম দ্বীপটি প্রকৃতির এক অপূর্ব রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই অঞ্চলে ৭০-এর দশকে বন বিভাগের কার্যক্রম শুরু হলে প্রথমে চার জোড়ার হরিণ ছাড়া হয়, যা আজকাল নিঝুম দ্বীপকে হরিণের অভয়ারণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। বর্তমানে হরিণের সংখ্যা প্রায় ৪০ হাজার, যা বিশেষ করে অতিথি পাখিদের জন্যে এক আকর্ষণীয় স্থান হয়ে উঠেছে। শীতকালে হাজারো অতিথি পাখি, যেমন সরালি, রাজহাঁস, ও বাটান, এই দ্বীপে আগমন করে। নিঝুম দ্বীপের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও প্রাণীসম্পদ সত্যিই চিত্তাকর্ষক, যেখানে প্রকৃতির গভীরে হারিয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়।
দর্শনীয় স্থানসমূহ
নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে কবিরাজের চরের কাছে চৌধুরীর খাল দিয়ে হাঁটলে হরিণের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। চাইলে ট্রলার ভাড়া করে মাঝির সাহায্যে সহজেই হরিণ দেখতে যেতে পারেন। ১০-১৫ জনের জন্য ট্রলার ভাড়া নিতে লাগবে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা।
সন্ধ্যায় কবিরাজের চরে সূর্যাস্তের সময় হাজার মহিষের পাল আপনাকে মন্ত্রমুগ্ধ করবে। কমলার দ্বীপের কমলার খালে প্রচুর ইলিশ মেলে, যা স্থানীয়দের কাছ থেকে কিনতে পারেন। সকালবেলা স্থানীয় ছোট ছোট ছেলে গাইড হিসেবে আপনাকে নিয়ে ম্যানগ্রোভ বনের হরিণ দেখাতে যেতে পারে। নামার বাজার থেকে সি বীচ হেঁটে যেতে মাত্র ১০ মিনিট লাগে, যেখানে সূর্য উদয় ও সূর্যাস্তের দৃশ্য উপভোগ করার পাশাপাশি বারবিকিউ করার সুযোগও রয়েছে।
দমার চরের দক্ষিণ দিকে নতুন সী বিচটি ভার্জিন আইল্যান্ড নামে পরিচিত, যেখানে অজানা অনেক পাখির দেখা পাওয়া যায়। এই আইল্যান্ডে যেতে ৩০০০ থেকে ৩৫০০ টাকা ভাড়া ট্রলার লাগবে। চোয়াখালিতে নিঝুম রিসোর্টের বারান্দা থেকেও মাঝে মাঝে হরিণ দেখা যায়। সময় থাকলে ট্রলার রিজার্ভ নিয়ে ভোলার ঢালচর বা চর কুকরি-মুকরিতে একটি দিন কাটিয়ে আসা যেতে পারে, যা নিঝুম দ্বীপের সৌন্দর্যকে আরও গভীরভাবে অনুভব করার সুযোগ দেবে।
যাবেন কখন নিঝুম দ্বীপে
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের জন্য শীতকাল, অর্থাৎ অক্টোবর থেকে এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়টি আদর্শ। এই সময়ের আবহাওয়া অনুকূল থাকায় দ্বীপের সৌন্দর্য উপভোগ করা সহজ হয়। তবে বছরের অন্যান্য সময়, বিশেষ করে বর্ষাকালে, মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগর উত্তাল হয়ে ওঠে, যা দ্বীপে যাত্রাকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে। তাই মেঘনার তরঙ্গের শক্তি বিবেচনা করে ভ্রমণের সময় নির্ধারণ করা উচিত, যাতে নিরাপদে এবং আনন্দময়ভাবে নিঝুম দ্বীপের অভিজ্ঞতা নেওয়া যায়।
যাবেন কিভাবে
বাসে চড়ে ঢাকা থেকে নিঝুম দ্বীপঃ ঢাকা থেকে নোয়াখালী হয়ে নিঝুম দ্বীপে পৌঁছাতে চাইলে সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে একুশে এক্সপ্রেস, মুনলাইন এন্টারপ্রাইজ, বা হিমাচল এক্সপ্রেসের বাসে চড়ে সোনাপুরে যেতে হবে। ধানমন্ডি জিগাতলা কাউন্টার থেকে একুশে পরিবহনের একটি বাস রাত ১০:২০ মিনিটে ছাড়ে। এসব বাসের নন-এসি ও এসি কোচের ভাড়া ৫৫০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে। সোনাপুরে পৌঁছে সিএনজি বা অন্যান্য যানবাহনে চেয়ারম্যান ঘাটের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে, যেখানে সিএনজি রিজার্ভ করতে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা খরচ হবে। একটি সিএনজিতে সর্বাধিক ৫ জন যাত্রী বসতে পারবেন।
চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে সি-ট্রাক, ট্রলার ও স্পিড বোটের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে সি-ট্রাকের ভাড়া জনপ্রতি ৯০ টাকা, ট্রলারের ১২০-১৫০ টাকা এবং স্পিড বোটের ৪০০ টাকা। হাতিয়ার নলচিরা ঘাটে নেমে মোটর সাইকেল ভাড়া করে মোক্তারিয়া ঘাটে যেতে হবে, যার জন্য দুই জনের জন্য ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা লাগবে। অবশেষে মোক্তারিয়া ঘাট থেকে ট্রলারে করে বন্দরটিলা ঘাটে পৌঁছাতে ২২ টাকার ভাড়া লাগে, এরপর মোটর সাইকেলে করে নামার বাজারে পৌঁছাতে হবে, যা দুই জনের জন্য ১০০ টাকা। উল্লেখ্য, নোয়াখালী চেয়ারম্যান ঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৮ টায় সি-ট্রাক ছাড়ে, এবং নলচিরা থেকে ফিরতি সি-ট্রাক সকাল ১০ টায় ছাড়ে।
ঢাকা থেকে ট্রেনে করে নিঝুম দ্বীপ যেতে চাইলে প্রথমে নোয়াখালীর মাইজদি স্টেশনে নামতে হবে। ঢাকার কমলাপুর থেকে উপকূল এক্সপ্রেস নামক আন্তঃনগর ট্রেনটি সপ্তাহে ছয় দিন (মঙ্গলবার ছাড়া) বিকাল ৩:১০ মিনিটে নোয়াখালীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করে এবং মাইজদিতে পৌঁছাতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় নেয়। ট্রেনের শ্রেণী অনুযায়ী ভাড়া ৩১৫ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। মাইজদি থেকে সিএনজি রিজার্ভ করে চেয়ারম্যান ঘাটে যেতে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খরচ হয়, আর লোকাল সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকার মধ্যে। এরপর চেয়ারম্যান ঘাট থেকে আগের বর্ণিত উপায়ে নিঝুম দ্বীপে পৌঁছানো সম্ভব।
লঞ্চে ঢাকার সদরঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপঃ ঢাকার সদরঘাট থেকে প্রতিদিন বিকাল ৫:৩০ মিনিটে হাতিয়ার উদ্দেশ্যে একটি মাত্র লঞ্চ যাত্রা করে এবং পরদিন সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে তমুরদ্দী ঘাটে পৌঁছায়। তমুরদ্দী ঘাট থেকে ঢাকায় ফেরার লঞ্চ দুপুর ১২:৩০ মিনিটে ছাড়ে। লঞ্চ ভাড়া ডেকে ৩৫০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ১২০০ টাকা, এবং ডাবল কেবিন ২২০০ টাকা। তমুরদ্দী ঘাট থেকে মোটরসাইকেল করে মোক্তারিয়া ঘাটে পৌঁছাতে দুইজনের জন্য ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা ভাড়া লাগে। মোক্তারিয়া ঘাট থেকে ট্রলারে করে নিঝুম দ্বীপের বন্দরটিলা ঘাটে পৌঁছাতে জনপ্রতি ভাড়া ২২ টাকা। এরপর বন্দরটিলা ঘাট থেকে মোটরসাইকেলে করে নামার বাজারে পৌঁছাতে দুইজনের জন্য ১০০ টাকা খরচ হয়। এছাড়া, তমুরদ্দী ঘাট থেকে সরাসরি নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার যেতে ফিশিং ট্রলারেও যাওয়া যায়, যার ভাড়া জনপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
যদি কোনো কারণে আপনি এম.ভি. ফারহান ৩ বা ৪ লঞ্চ মিস করেন, তাহলে সেই দিনই বিকাল ৬:৩০ টায় যাত্রা শুরু করা এম.ভি. টিপু-৫ অথবা এম.ভি. পানামা লঞ্চে করে তজুমুদ্দিন বা মনপুরা ঘাটে নামতে পারেন। সেখান থেকে আবার এম.ভি. ফারহান ৩ বা ৪ লঞ্চ ধরার সুযোগ পাবেন। মনপুরা ঘাট থেকে সরাসরি ট্রলারে করে হাতিয়ার তমুরুদ্দি ঘাটেও সহজে যাওয়া সম্ভব। আর যদি টিপু-৫ বা পানামা লঞ্চও মিস করে ফেলেন, তবে দ্রুত এম.ভি. ফারহান ৬ বা ৭ লঞ্চ ধরতে পারেন। এ লঞ্চগুলোও বিকাল ৬:৩০ মিনিটে যাত্রা শুরু করে, যদিও সাধারণত কিছুটা দেরি হয়। তজুমুদ্দিন ঘাট থেকে এম.ভি. ফারহান ৩/৪ ধরতে পারবেন বা ট্রলারে করে তমুরুদ্দি ঘাটেও যেতে পারবেন।
চট্টগ্রামের সদরঘাট থেকে নিঝুম দ্বীপে যেতে চাইলে সপ্তাহে তিন দিন (শুক্রবার ও রবিবার বাদে) সকাল ৯টায় এম.ভি. বার আউলিয়া, এম.ভি. আব্দুল মতিন এবং এম.বি. মনিরুল হক স্টীমার হাতিয়ার নলচিরা ঘাট পর্যন্ত চলাচল করে। এ যাত্রায় চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়ায় পৌঁছাতে চেয়ার ক্লাসের ভাড়া ৩৫০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণীর ভাড়া ১১১০ টাকা এবং প্রথম শ্রেণীর ভাড়া ২২১৫ টাকা। নলচিরা ঘাটে পৌঁছে মোটরসাইকেল রিজার্ভ করে মোক্তারিয়া ঘাটে আসতে পারবেন, এরপর সেখান থেকে ট্রলারে করে নিঝুম দ্বীপের পথে রওনা হতে পারবেন।
থাকবেন কোথায়
নিঝুম দ্বীপে ভ্রমণের সময় থাকার জন্য বেশ কয়েকটি জায়গা আছে, যেখানে আপনি সুবিধা ও বাজেট অনুযায়ী পছন্দমতো থাকতে পারবেন। নামার বাজার সী বিচের কাছে অবস্থিত অবকাশ পর্যটনের নিঝুম রিসোর্ট একটি দারুণ অপশন। এখানে বিভিন্ন ক্যাটাগরির রুম পাওয়া যায়, যার ভাড়া ১৫০০ থেকে ৩০০০ টাকার মধ্যে। আর যদি অফ সিজনে (এপ্রিল ১৫ থেকে সেপ্টেম্বর ৩০ পর্যন্ত) যান, তাহলে এখানে ৫০% পর্যন্ত ডিসকাউন্ট পাবেন, যা ভ্রমণকারীদের জন্য বেশ সাশ্রয়ী। রিসোর্টের বুকিং করতে চাইলে সবুজ ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন (01724-145864, 01845-558899, 01738-230655)। ঢাকাতেও তাদের অফিস রয়েছে – অবকাশ পর্যটন লিমিটেড, আলহাজ সামসুদ্দিন ম্যানসন (নবম তলা), ১৭ নিউ ইস্কাটন রোড; ফোন: 9342351, 9359230, 8358485, 01552-372269।
অন্যদিকে, হোটেল শাহিন নামার বাজারে অবস্থিত এবং এটির ভাড়া তুলনামূলকভাবে একটু বেশি হলেও যারা আরামদায়ক পরিবেশে থাকতে চান তাদের জন্য এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। হোটেল শাহিনে থাকতে চাইলে 01863-150881 নাম্বারে যোগাযোগ করে আগাম বুকিং করে নিতে পারেন।
যদি আপনি সাশ্রয়ীভাবে থাকতে চান, তবে মসজিদ বোর্ডিং একটি ভালো অপশন। এটি স্থানীয় মসজিদ থেকে পরিচালিত একটি থাকার ব্যবস্থা। যদিও এখানে এটাচ বাথরুম বা জেনারেটরের কোনো সুবিধা নেই, তবে দুইটি কমন বাথরুম ও একটি টিউবওয়েলের ব্যবস্থা রয়েছে। সিঙ্গেল ও ডাবল বেডের রুম পাওয়া যায় ২০০ থেকে ৪০০ টাকায়। যোগাযোগের জন্য 01866-373937 এবং 01727-958879 নাম্বারে ফোন করে বুকিং করতে পারেন।
এছাড়াও, অনেকেই হোটেল দ্বীপ সম্পদ, যা স্থানীয়ভাবে সৈয়দ চাচার হোটেল নামে পরিচিত, সেখানে থাকতে পছন্দ করেন। হোটেল দ্বীপ সম্পদে থাকা ও খাওয়ার সুবিধা রয়েছে এবং এটি খুবই জনপ্রিয়। থাকার জন্য 01720-601026 ও 01760-008106 নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন।
অন্য একটি অপশন হলো বন্দরটিলায় অবস্থিত নিঝুম ড্রিমল্যান্ড রিসোর্ট। এখানে থাকার জন্য বেশ ভালো পরিবেশ পাওয়া যায়। ঢাকা থেকে বুকিং করতে চাইলে 01847-123573 নাম্বারে এবং নিঝুম দ্বীপ থেকে বুকিং করতে চাইলে 01847-123572 নাম্বারে যোগাযোগ করতে পারেন। এছাড়া হোটেল শেরাটনও একটি উল্লেখযোগ্য থাকার জায়গা, যেখানে চাইলে রাত কাটাতে পারেন।
এই বিভিন্ন থাকার ব্যবস্থার মধ্যে আপনি আপনার পছন্দ, সুবিধা ও বাজেট অনুযায়ী কোনো একটি বেছে নিতে পারবেন।
খাবেন কোথায়
নিঝুম দ্বীপে খাবারের ব্যবস্থা খুব বৈচিত্র্যময় না হলেও বেশ কিছু লোকাল হোটেল ও রেস্টুরেন্টে সাদামাটা কিন্তু সুস্বাদু খাবার পাওয়া যায়। এখানে সামুদ্রিক মাছ, মোটা চালের ভাত, মাংস, এবং রুটি সহজলভ্য। বিশেষ করে যারা মাছপ্রেমী, তাদের জন্য সামুদ্রিক মাছ এবং চিংড়ি বেশ সুস্বাদু হয়ে থাকে।
খাবারের মানের দিক থেকে আলতাফ চাচার হোটেল, যা স্থানীয়ভাবে হোটেল আসিফ নামে পরিচিত, বেশ ভালো বলে মনে করা হয়। অন্যান্য হোটেলের তুলনায় এখানে খাবারের মান একটু উন্নত। তবে নিঝুম দ্বীপে ভ্রমণের সময় ভালো খাবার পেতে হলে আগে থেকে অর্ডার দিয়ে রাখলে সুবিধা হয়। এতে করে তুলনামূলক ভালো এবং টাটকা খাবার পাওয়া যায়।
পরামর্শ
নিঝুম দ্বীপের নামার বাজার এলাকায়ও বেশ কিছু খাবারের হোটেল আছে। সেখানে স্থানীয় খাবারের পাশাপাশি, সামুদ্রিক মাছ ও চিংড়ির ভাজা বেশ জনপ্রিয়। যারা বিশেষ কিছু আয়োজন করতে চান, তাদের জন্য নিঝুম রিসোর্টের ম্যানেজার সবুজ ভাই বারবিকিউয়ের ব্যবস্থা করতে পারেন, যা একটি বিশেষ অভিজ্ঞতা হতে পারে।
এছাড়া, এখানে আরও একটি মজার বিষয় হলো – ডাবের দাম। নিঝুম দ্বীপে ২০ থেকে ২৫ টাকার মধ্যে টাটকা ডাব পাওয়া যায়, যা ভ্রমণকারীদের জন্য বেশ উপভোগ্য এবং তৃষ্ণা মেটানোর জন্য চমৎকার।
নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণে বেশ কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত, বিশেষ করে যাতায়াত এবং প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির বিষয়ে। চেয়ারম্যান ঘাট বা নলচিরা থেকে সি-ট্রাকগুলো জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর করে চলে। প্রতিটি ট্রলার সাধারণত প্রতি ২ ঘণ্টা পরপর ছেড়ে যায়, তবে বিকেল ৫টার পর থেকে ট্রলার চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তাই সময়মতো ঘাটে পৌঁছানো জরুরি।
যারা ক্যাম্পিং করতে চান, তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সব সরঞ্জাম নামার বাজারে পাওয়া যায়। তাই কোনো ভারি জিনিস বহন না করে এখান থেকে কিনে নিতে পারেন।
যদিও বর্তমানে প্রায় সব মোবাইল অপারেটরের নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, নিঝুম দ্বীপে ৩জি ইন্টারনেট সুবিধা মূলত রবি এবং এয়ারটেল সিমেই রয়েছে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো—নিঝুম দ্বীপে এখনও বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নেই। এখানকার মানুষজন সোলার এবং জেনারেটরের উপর নির্ভরশীল। তাই ভ্রমণের সময় মোবাইলের এক্সট্রা ব্যাটারি কিংবা পাওয়ার ব্যাংক সাথে রাখা ভালো। প্রয়োজনে টর্চ, মোবাইল বা ক্যামেরার ব্যাটারি চার্জ করার জন্য দুটি দোকান আছে, যেখানে আপনি চার্জ করতে পারবেন।
এখানকার মানুষ অত্যন্ত সহজ-সরল ও অতিথিপরায়ণ। তাদের সাথে সদাচরণ করুন, আর তাদের থেকে সাহায্য বা পরামর্শ নিতে কখনো দ্বিধা করবেন না। নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান এলাকায় বোট ভাড়া করার জন্য আলতাব হোসেন নামের একজন মাঝির সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
ভ্রমণ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করুন এবং আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।