জাতীয় স্মৃতিসৌধ ভ্রমণ

জাতীয় স্মৃতিসৌধ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীর শহীদদের স্মরণে নির্মিত এক অনন্য স্মারক। ঢাকা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরে সাভারে অবস্থিত এই স্মৃতিসৌধটি ৪৪ হেক্টর জমির উপর স্থাপিত। বিশিষ্ট স্থপতি সৈয়দ মইনুল হোসেনের নকশায় এটি ১৯৮২ সালে নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়। সৌধটির কেন্দ্রীয় কাঠামো সাতটি ত্রিভুজাকৃতির দেয়াল দ্বারা গঠিত, যা একের পর এক ক্রমান্বয়ে আকারে বৃদ্ধি পায়। কেন্দ্রীয় দেয়ালটি সবচেয়ে ছোট হলেও, এর উচ্চতা অন্যান্য সব দেয়ালের চেয়ে বেশি, যার চূড়া ১৫০ ফুট উঁচুতে উঠেছে। কংক্রিটের নির্মিত মূল কাঠামোর পাশাপাশি লাল ইটের ব্যবহারে তৈরি হয়েছে একটি প্রতীকী দৃষ্টিভঙ্গি, যা রক্তের মূল্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতার প্রতিফলন করে। স্মৃতিসৌধটি বিভিন্ন দিক থেকে দেখলে তার আকার ও নকশায় ভিন্ন ভিন্ন চিত্র ফুটে ওঠে, যা এর অনন্য বৈশিষ্ট্য।

স্মৃতিসৌধে সাতটি স্তম্ভ কেন?

জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামো সাতটি ত্রিভুজাকৃতির দেয়াল নিয়ে তৈরি, যা আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাতটি আলাদা ধাপকে প্রতীকীভাবে তুলে ধরে।

১) ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন।
২) ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন।
৩) ১৯৫৬ সালের শাসনতন্ত্র আন্দোলন।
৪) ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন।
৫) ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলন।
৬) ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান, এবং
৭) ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ।

জাতীয় স্মৃতিসৌধ কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে মনোমুগ্ধকর বাগান, কৃত্রিম জলাশয় এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক বাহিনীর নির্মমতার স্মৃতি বহন করা ঐতিহাসিক বধ্যভূমি ও গণকবর। মুক্তিযুদ্ধের পর এই বধ্যভূমি ও গণকবরগুলো আবিষ্কৃত হয় এবং স্মৃতিসৌধের মূল কাঠামোর সঙ্গে যুক্ত করা হয়। স্মৃতিসৌধের সামনে অবস্থিত জলাশয়টি শাপলায় পরিপূর্ণ, যেখানে স্মৃতিসৌধের প্রতিফলিত চিত্র একটি অনন্য সৌন্দর্য সৃষ্টি করে। এটি প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত, এবং প্রবেশের জন্য কোনো টিকিটের প্রয়োজন নেই।

কীভাবে যাবেন স্মৃতিসৌধে

ঢাকা থেকে স্মৃতিসৌধে পৌঁছানোর জন্য বেশ কিছু পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে, বিশেষ করে বিআরটিসির বাস। মতিঝিল, গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট, আসাদগেট, শ্যামলী, এবং গাবতলী থেকে সহজেই বিআরটিসির বাসে স্মৃতিসৌধে যাওয়া যায়। এছাড়া মিরপুর ১২ থেকে তিতাস পরিবহনের বাস মিরপুর ১০, মিরপুর ১, এবং গাবতলী হয়ে স্মৃতিসৌধের দিকে রওনা হয়। যারা নবীনগরের কাছাকাছি যেতে চান, তারা মতিঝিল কিংবা গুলিস্তান থেকে বাস ধরে সেখানে নেমে, সেখান থেকে সহজেই স্মৃতিসৌধে পৌঁছাতে পারেন।

ভ্রমণ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করুন এবং আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।

বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে জানিয়ে দিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top