রাঙ্গামাটি জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণ হলো কাপ্তাই হ্রদের ওপর নির্মিত ৩৩৫ ফুট লম্বা ঝুলন্ত সেতু। এটি রাঙ্গামাটির প্রতীক হিসেবে খ্যাত এবং প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক এখানে ভিড় জমান শুধু এর সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য। পাহাড়ের দুই প্রান্তকে সংযুক্ত করা এই সেতুতে দাঁড়িয়ে চারপাশের নৈসর্গিক দৃশ্য দেখতে পাওয়া যায়, বিশেষ করে কাপ্তাই লেকের শান্ত জলরাশির মনোমুগ্ধকর পরিবেশ। সেতুর পাশে শিশুদের বিনোদনের জন্য রয়েছে দোলনা ও স্লিপার। আর যদি লেকে ভ্রমণ করতে চান, তাহলে ইঞ্জিন চালিত বোট ঘন্টাপ্রতি ২০০-৩০০ টাকায় ভাড়া করে নিতে পারবেন। সেতুতে প্রবেশ করতে জনপ্রতি ২০ টাকার টিকেটের ব্যবস্থা করেছে পর্যটন কর্পোরেশন, যা এ ভ্রমণকে আরও উপভোগ্য করে তোলে।
রাঙ্গামাটি যাবেন কখন এবং কি দেখবেন
রাঙ্গামাটির ঝুলন্ত ব্রিজ (Hanging Bridge) বছরের যেকোনো সময় ভ্রমণের জন্য আদর্শ হলেও বর্ষাকালে সতর্ক থাকা জরুরি। অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে কখনো কখনো ব্রিজের ওপর পানি উঠে যায়, তাই বর্ষায় যাওয়ার আগে এই তথ্যটি নিশ্চিত হয়ে যাওয়া ভালো। শীতকাল পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় সময়, কারণ এই সময়ে আবহাওয়াও মনোরম থাকে এবং ঝুলন্ত ব্রিজ ভ্রমণ উপভোগ্য হয়। তবে রাঙ্গামাটিতে এসে শুধু ঝুলন্ত ব্রিজেই সীমাবদ্ধ থাকা নয়, বরং আশেপাশের অন্যান্য দর্শনীয় স্থানও একইদিনে ঘুরে দেখা যায়। সারাদিনের জন্য ট্রলার বা বোট রিজার্ভ করে আপনি ঝুলন্ত ব্রিজের পাশাপাশি শুভলং ঝর্ণা, রাজবন বিহার এবং কাপ্তাই লেকের অন্যান্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোতে ঘুরে বেড়াতে পারবেন। আপনার ভ্রমণ পরিকল্পনা অনুযায়ী বোট রিজার্ভ করলে পুরো দিনটি হবে আনন্দময় ও স্মরণীয়।
রাঙ্গামাটি যাবেন কিভাবে
ঢাকা থেকে রাঙ্গামাটি যেতে ফকিরাপুল, আব্দুল্লাহপুর ও সায়দাবাদ থেকে প্রতিদিন অনেক বাস ছেড়ে যায়। এই বাসগুলো সাধারণত সকাল ৮টা থেকে ৯টা এবং রাত ৮টা ৩০ মিনিট থেকে রাত ১১টার মধ্যে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ১২০০ থেকে ১৮০০ টাকা, আর নন-এসি বাসের ভাড়া ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটি যেতে অক্সিজেন মোড় বা বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে গেইটলক বা ডাইরেক্ট বাস নিতে পারেন, যা সাধারণত ১৫০ টাকার মধ্যে ভাড়া হয়। রাঙ্গামাটি পৌঁছে তবলছড়ি বা বনরূপা থেকে সিএনজি নিয়ে ঝুলন্ত ব্রিজ যেতে পারবেন, যেখানে তবলছড়ি থেকে ভাড়া ৫০-৬০ টাকা এবং বনরূপা থেকে ১২০ টাকা।
থকবেন কথায়
রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন মানের গেস্ট হাউস এবং হোটেল রয়েছে, যেখানে ভ্রমণকারীরা তাদের পছন্দ অনুযায়ী থাকতে পারেন। শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড ও রিজার্ভ বাজার এলাকার লেকের কাছাকাছি হোটেল ঠিক করলে কাপ্তাই লেকের মনোরম পরিবেশ এবং হিমেল বাতাস উপভোগ করতে পারবেন। কম বাজেটের জন্য বোডিংগুলোতে থাকা গেলেও, সেগুলোর মান খুব ভালো নয়। কিছু উল্লেখযোগ্য আবাসিক হোটেলের মধ্যে আছে:
হোটেল গ্রিন ক্যাসেল: রিজার্ভ বাজারে অবস্থিত এই হোটেলে নন-এসি সিঙ্গেল, ডাবল ও ত্রিপল বেডের রুমের ভাড়া যথাক্রমে ৮০০, ১০০০, ও ১২০০ টাকা। এসি কাপল বেডের রুম ১৬০০ টাকা এবং এসি ত্রিপল বেডের রুম ২০০০ টাকায় পাওয়া যায়।
যোগাযোগ: 01726-511532, 01815-459146
পর্যটন মোটেল: ঝুলন্ত ব্রিজের পাশে অবস্থিত এই হোটেলে নন-এসি ডাবল বেডের রুমের ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা, আর এসি ডাবল বেডের রুমের জন্য ১৫০০-১৮০০ টাকা খরচ হবে।
যোগাযোগ: ০৩৫১-৬৩১২৬
রংধনু গেস্ট হাউজ: ফ্যামিলি বেডের রুমের ভাড়া ৬৫০ টাকা এবং কাপল বেডের রুম ৫০০ টাকায় পাওয়া যায়।
যোগাযোগ: 01816-712622, 01712-392430
এছাড়া, হোটেল সুফিয়া এবং হোটেল আল-মোবা-ও ভালো বিকল্প হতে পারে, যেখানে তাদের ভাড়া এবং সেবার মান আপনাকে মানানসই একটি পরিবেশ দিতে পারবে।
কি খাবেন
রাঙ্গামাটিতে বিভিন্ন ধরণের রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেখানে আপনি বাজেট অনুযায়ী পছন্দের খাবার খেতে পারবেন। এখানে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী খাবারগুলো বিশেষভাবে জনপ্রিয়, এবং এগুলোর স্বাদ না নিয়ে ফিরলে ভ্রমণ অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে। প্রতিটি রেস্টুরেন্টে ভিন্ন ধরনের রান্না ও স্বাদ উপভোগ করতে পারবেন, তাই খাবারের পছন্দের ক্ষেত্রে নির্দ্বিধায় স্থানীয় রান্নাগুলো চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
আশেপাশে দর্শনীয় স্থান
রাঙ্গামাটি জেলায় পর্যটকদের জন্য আরও অনেক আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্থান রয়েছে। এর মধ্যে শুভলং ঝর্ণার অপরূপ সৌন্দর্য, কাপ্তাই লেকের মনোরম দৃশ্য, শেখ রাসেল এভিয়ারী এবং ইকো পার্কের প্রশান্তি, এবং উপজাতীয় জাদুঘরের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া ঝুম রেস্তোরা, টুকটুক ইকো ভিলেজ, এবং চিৎমরম গ্রামের টাওয়ারও দর্শকদের নজর কাড়ে। যমচুক, রাইক্ষ্যং পুকুর, নির্বাণপুর বন ভাবনা কেন্দ্র, এবং রাজবন বিহারও ভ্রমণের জন্য মনোরম স্থান। ঐতিহ্যবাহী চাকমা রাজবাড়ি, পেদা টিং টিং, এবং উপজাতীয় টেক্সটাইল মার্কেটের দিকে নজর দিতে ভুলবেন না। এছাড়া নৌ-বাহিনীর পিকনিক স্পট, রাজস্থলী ঝুলন্ত সেতু, ফুরমোন পাহাড়, সাজেক ভ্যালি, আর্যপুর ধর্মোজ্জ্বল বনবিহার, ডলুছড়ি জেতবন বিহার, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র, কাট্টলী বিল এবং ন-কাবা ছড়া ঝর্ণাও আপনার ভ্রমণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা উচিত।
ভ্রমণের সময় কিছু কার্যকর টিপস এবং সতর্কতার দিকে খেয়াল রাখা জরুরি। দলবদ্ধভাবে গেলে খরচ অনেকটাই কমে যায়, তাই বন্ধু বা পরিবারকে সাথে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করুন। অফসিজনে এবং ছুটির দিন বাদ দিয়ে ভ্রমণ করলে খরচও কম হবে। ট্রলার বা বোট রিজার্ভ করার সময় গন্তব্যস্থল সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নিয়ে দরদাম করুন। লেকের পাশে হোটেল নির্বাচনে গুরুত্ব দিন, যাতে সেখানে থাকার সময় প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।
লেকের পানির গভীরতা সম্পর্কে নিশ্চিত না হলে মাঝির সঙ্গে কথা বলে জেনে নিন। অহেতুক রিকশা বা অটোরিকশা নেবেন না, কারণ অনেক স্থান একদিনে দেখা সম্ভব। পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি না করে সচেতন থাকতে হবে; তাই স্থানীয়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করুন এবং শালীন আচরণ করুন। এইসব টিপস অনুসরণ করলে আপনার ভ্রমণটি হবে আরও আনন্দময় ও স্মরণীয়।
ভ্রমণ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করুন এবং আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।