দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী ভ্রমণ

সুন্দরবনের দুবলার চরের শুঁটকি পল্লী বাংলাদেশের সামুদ্রিক মাছ প্রক্রিয়াকরণের একটি ব্যস্ততম ও ঐতিহ্যবাহী কেন্দ্র। সাগর থেকে মাছ ধরে এনে এখানে শুঁটকি তৈরি ও বিক্রি হয়, যা সত্যিই উপভোগ্য একটি অভিজ্ঞতা। এই অঞ্চলে লইট্টা, ছুরি, চিংড়ি, রূপচাঁদা, ইছা, খলিসাসহ প্রায় একশো প্রজাতির মাছ শুঁটকি হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। জেলেরা সাগর থেকে মাছ তুলে এনে রোদে শুকিয়ে বিশেষ প্রক্রিয়ায় শুঁটকি তৈরি করেন, যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সরবরাহ করা হয়।

দুবলার চর শুধুই শুঁটকির জন্য নয়, বরং এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং বিশেষত রাসমেলাকে কেন্দ্র করেও এখানে প্রতি বছর অনেক ভ্রমণপিপাসু আসে। যদিও এবছর করোনা মহামারির কারণে মেলা না হওয়ায় ব্যবসা কিছুটা কমেছে। তবে শুঁটকির উৎপাদন ও বিক্রি চলছে পুরোদমে।

বছরের নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত জেলেরা কার্তিক মাসে এসে চৈত্র পর্যন্ত মাছ আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়া করেন। অস্থায়ীভাবে তৈরি বাঁশ ও ছনের ঘরগুলোতে কাজ চলে, আর শুঁটকি তৈরি হয় খোলা আকাশের নিচে বাঁশের মাঁচায় শুকিয়ে। শুঁটকি বাজারে পৌঁছানোর জন্য বিভিন্ন পরিবহন সংস্থা কাজ করে, যার মধ্যে খান শফিউল্লাহ ট্রান্সপোর্ট অন্যতম।

সুন্দরবনের এই শুঁটকি শিল্প দেশের বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ হয়ে থাকে, যেমন চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, রংপুর, এবং অন্যান্য মোকামে। যদিও করোনার প্রভাবে এবছর শুঁটকির দাম কিছুটা কমেছে, তবে এ শিল্পে নিযুক্ত হাজার হাজার জেলে ও ব্যবসায়ী আগামী দিনগুলোতে উন্নতির প্রত্যাশায় রয়েছেন।

দুবলার চরে যাবেন কীভাবে

ঢাকার গাবতলী বা সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি বাসে করে পদ্মা সেতু পার হয়ে সহজেই বাগেরহাটে পৌঁছানো সম্ভব। সাকুরা, সোহাগ, মেঘনা, পর্যটক পরিবহনসহ বিভিন্ন বাস সার্ভিস এই রুটে চলাচল করে। বাগেরহাটে পৌঁছে মোংলা বন্দরে গিয়ে নৌযান ভাড়া করে দুবলার চরের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারেন। তবে সরাসরি সায়দাবাদ থেকে মোংলায় যাওয়ার বাস ধরে যাত্রা করলে সুবিধা হয়। সুন্দরবন ও পর্যটক সার্ভিসের বাসে জনপ্রতি ভাড়া প্রায় ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা।

দুবলার চরে থাকবেন কোথায়

দুবলার চরে থাকতে চাইলে যে ট্যুরিস্ট লঞ্চে যাবেন, সেটিতেই থাকার ব্যবস্থা থাকে। এছাড়া সুন্দরবনের হিরণপয়েন্টের নীলকমল, টাইগার পয়েন্টের কচিখালী এবং কাটকার বন বিভাগের রেস্ট হাউজে রাত্রিযাপন করার সুযোগ রয়েছে। নীলকমল ও কচিখালীর রেস্ট হাউজে কক্ষ প্রতি ভাড়া ৩০০০ টাকা, তবে কচিখালীতে ৪টি কক্ষ একসাথে নিলে ১০,০০০ টাকায় থাকতে পারবেন। কটকার রেস্ট হাউজে একটি কক্ষের জন্য ভাড়া ২০০০ টাকা নির্ধারিত। বিদেশি পর্যটকদের জন্য এইসব রেস্ট হাউজে রাত কাটানোর খরচ রুম প্রতি ৫০০০ টাকা।

আরো যা যা দেখতে পারেন

কটকা সমুদ্র সৈকত, হিরণপয়েন্ট এবং নিঝুম দ্বীপ—বাংলাদেশের সুন্দরবন ও উপকূল অঞ্চলের তিনটি দৃষ্টিনন্দন স্থান, যেগুলো প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয়।

কটকা সমুদ্র সৈকত সুন্দরবনের গভীরে অবস্থিত, যেখানে বন্যপ্রাণী এবং প্রকৃতির এক অপরূপ মেলবন্ধন রয়েছে। এখানকার সৈকতটি সুন্দরবনের সবচেয়ে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন সৈকত হিসেবে পরিচিত। কটকা মূলত বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণের জন্য বিখ্যাত, আর বিশেষ করে এখানকার হরিণ, বানর, এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এছাড়া কটকার সমুদ্র তীরবর্তী সবুজ বনাঞ্চল প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক অনন্য অভিজ্ঞতা এনে দেয়।

হিরণপয়েন্ট (নীলকমল নামেও পরিচিত) সুন্দরবনের আরও একটি বিখ্যাত জায়গা। এটি বন্যপ্রাণী পর্যবেক্ষণ ও ম্যাংগ্রোভ বন দেখতে আসা পর্যটকদের জন্য একটি চমৎকার স্থান। হিরণপয়েন্ট বাঘ, কুমির, হরিণ, এবং পাখিদের জন্য বিখ্যাত, এবং এখানে গিয়ে সুন্দরবনের প্রকৃতি এবং বন্যপ্রাণীর সাথে সরাসরি পরিচিত হওয়ার সুযোগ পাওয়া যায়। বন বিভাগের রেস্ট হাউজেও পর্যটকদের রাত্রিযাপন করার সুযোগ রয়েছে।

নিঝুম দ্বীপ, নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত একটি ছোট্ট দ্বীপ। এটি প্রকৃতির নীরবতা ও সৌন্দর্যের এক মোহনীয় জায়গা। দ্বীপটি মূলত নির্জন, এবং এখানকার সবুজ বনাঞ্চল ও বিস্তীর্ণ মাঠ পর্যটকদের আকর্ষণ করে। এখানে বন্য হরিণের দলের দেখা মেলে, যা দ্বীপটিকে বিশেষ করে তোলে। নিঝুম দ্বীপের নির্জনতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সত্যিই অবিস্মরণীয়।

এই তিনটি স্থান বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য উপযুক্ত, যেখানে প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও বন্যপ্রাণীর অনন্য অভিজ্ঞতা পাওয়া যায়।

ভ্রমণ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করুন এবং আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।

বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে জানিয়ে দিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top