পৃথিবীর অন্যতম প্রাকৃতিক বিস্ময় সুন্দরবন, যা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই বনাঞ্চলটি বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে ভাগ হয়ে রয়েছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের অংশের আয়তন প্রায় ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার, যা খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলায় বিস্তৃত। ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো সুন্দরবনকে বিশ্ব ঐতিহ্যের স্বীকৃতি দেয়।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীর এক বিশাল অভয়ারণ্য বলা যেতে পারে। রয়েল বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, কুমির, এবং নানা প্রজাতির পাখি থেকে শুরু করে সরীসৃপ ও জলজ প্রাণীর বাসস্থান এই বন। এছাড়া প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদও এখানে পাওয়া যায়, যার মধ্যে সুন্দরী গাছের নাম থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ।
সুন্দরবন ভ্রমণে যাবেন কখন (উপযুক্ত সময়)
সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসকে সবচেয়ে উপযুক্ত সময় হিসেবে ধরা হয়। এই সময়টাতে আবহাওয়া স্বস্তিদায়ক থাকে এবং নদী ও সমুদ্র বেশ শান্ত থাকে, ফলে সুন্দরবনের ভেতরের বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখার জন্য এটি আদর্শ সময়। খুলনা বা মোংলা থেকে কাছাকাছি কিছু জায়গা যেমন করমজল বা হারবাড়িয়া সহজেই এক দিনের সফরে ঘোরা সম্ভব। তবে, প্রকৃত সুন্দরবনের অনন্য সৌন্দর্য উপভোগ করতে চাইলে আপনাকে বনের গভীর অংশে যেতে হবে, যেখানে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক রূপে বিরাজমান।
সুন্দরবনে কি কি দেখবেন
সুন্দরবনের বিশাল বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে রয়েছে নানা দর্শনীয় স্থান, তবে বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া সব জায়গায় যাওয়া যায় না। খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং বরগুনা দিয়ে সুন্দরবন ভ্রমণ করা গেলেও পর্যটকদের প্রধান গন্তব্য সাধারণত খুলনা ও মোংলা থেকে শুরু হয়। এই রুট ধরে ভ্রমণকারীরা করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালি, জামতলা, হিরণ পয়েন্ট এবং দুবলার চরের মতো আকর্ষণীয় স্থানগুলো ঘুরে দেখতে পারেন, যেখানে বনের প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্যের অনন্য রূপ ধরা পড়ে।
মোংলা থেকে সুন্দরবনের সবচেয়ে কাছে অবস্থিত করমজল মূলত বন বিভাগের হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে কাঠের তৈরি একটি ট্রেইল পথ রয়েছে, যা আপনাকে বনের ভেতর দিয়ে নিয়ে যাবে। পাশাপাশি এখানে দেখতে পাবেন হরিণ, কুমির, বানর এবং বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা। যারা সুন্দরবনের গভীর জঙ্গলে গিয়ে প্রাণীদের দেখা পান না, তাদের জন্য করমজল হলো সহজেই পশু–পাখি দেখার এক চমৎকার বিকল্প।
হারবাড়িয়া সুন্দরবনের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র, যা মোংলা থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই স্থানের প্রধান আকর্ষণ হলো বনের ভিতর দিয়ে চলে যাওয়া কাঠের ট্রেইল, যা ধরে হাঁটলে মনে হবে আপনি প্রকৃতির গভীরে ঢুকে পড়েছেন। পুরো ট্রেইলটি ঘুরে দেখতে প্রায় ৩০ মিনিট সময় লাগে। এখানে একটি পদ্মপুকুর এবং একটি ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে, যেখান থেকে পুরো হারবাড়িয়া এলাকা চোখে পড়ে। বনের এই কাঠের পথ ধরে হাঁটার সময় প্রকৃতির সাথে একাত্ম হয়ে অ্যাডভেঞ্চারের এক নতুন স্বাদ পাওয়া যায়, যা আপনাকে শিহরিত করবে।
কটকা হলো সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণীয় অভয়ারণ্য, যা বঙ্গোপসাগরের তীরে অবস্থিত। এখানে গেলে বন্য হরিণের দল প্রায়ই চোখে পড়ে, যা পর্যটকদের জন্য বড় একটি আনন্দের বিষয়। কটকার বনের ভেতরে একটি সুন্দর কাঠের ট্রেইল রয়েছে, যা কেওড়া গাছের ছায়ায় ঢাকা। ট্রেইল ধরে মাত্র ১৫ মিনিট হাঁটলেই হরিণের দলে দেখা মেলে, যারা নির্ভয়ে আশেপাশে ঘোরাঘুরি করে। প্রকৃতির নিস্তব্ধতা আর বন্যপ্রাণীদের সাথে এভাবে সরাসরি মোলাকাতের সুযোগই কটকাকে অন্যান্য স্থান থেকে আলাদা করে তুলেছে।
কটকার বনে ঘুরে এসে আরও কিছুটা দূরে হাঁটলেই পৌঁছে যাবেন কটকা বিচে। এই সমুদ্র সৈকত আপনাকে বঙ্গোপসাগরের বিস্তীর্ণ দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ করে দেবে। কটকা বিচের সৌন্দর্য অসাধারণ, যেখানে পরিষ্কার ও সজীব পরিবেশ আপনার মনোমুগ্ধকর অভিজ্ঞতার পরিমাণ বাড়িয়ে দেবে। বেলাভূমিতে আপনি দেখতে পাবেন লাল কাঁকড়াদের শিল্পকর্ম, যা সমুদ্র তীরে এক অনন্য চিত্রশিল্পের সৃষ্টি করে।
কটকার কাছেই অবস্থিত জামতলা (Jamtola) একটি বিশেষ পর্যটন স্থান। এখানে একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার রয়েছে, যা থেকে আপনি সুন্দরবনের বিস্তৃত সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারবেন। টাওয়ার থেকে মনোরম দৃশ্যের পাশাপাশি, ভাগ্য সহকারে আপনি হরিণ কিংবা বাঘও দেখতে পারেন। জামতলা ঘাট থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার হেঁটে গেলে পৌঁছে যাবেন জামতলা সমুদ্র সৈকতে, যা তার নির্জন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য পরিচিত।
মান্দারবাড়িয়া সৈকত (Mandalbariya Beach) একটি চমকপ্রদ ও অনাবিষ্কৃত স্থানে। এই সৈকতের কিছু অংশ এখনো অপরিচিত বলে মনে করা হয়। এখানে আপনি অপরূপ সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত উপভোগ করতে পারবেন। মান্দারবাড়িয়া সৈকত ভ্রমণের জন্য আপনাকে সাতক্ষীরা দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করতে হবে।
হীরন পয়েন্ট (Hiron Point) সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণীয় স্থান। এখানকার কাঠের তৈরি পথ ধরে হাঁটতে হাঁটতে আপনি দেখতে পাবেন হরিণ, বানর, গুইসাপ, এবং কুমির। মাঝে মাঝে এই অঞ্চলে বেঙ্গল টাইগারেরও দেখা মেলে, যা হীরন পয়েন্টকে একটি সত্যিই রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা করে তোলে।
দুবলার চর (Dublar Char) সুন্দরবনের একটি ছোট্ট চর, যা বঙ্গোপসাগরের সঙ্গে নদীর মিলনে গঠিত হয়েছে। এই চরটি হিন্দুধর্মের পূণ্যস্নান, রাসমেলা এবং শুটকি তৈরির জন্য বিখ্যাত। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এখানে প্রায় ১০ হাজার জেলে সাময়িকভাবে বসতি গড়ে তোলে, যারা মাছ ধরার পাশাপাশি শুঁটকি শুকানোর কাজ করেন।
সুন্দরবন কিভাবে ভ্রমণ করবেন
সুন্দরবনে ভ্রমণের জন্য একা বা ছোট গ্রুপে যাওয়া সম্ভব নয়। ভেতরে ঘুরতে হলে ফরেস্ট অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে নিরাপত্তারক্ষী সঙ্গে রাখা বাধ্যতামূলক। পুরো সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য লঞ্চ বা শিপ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। নিরাপত্তা, অনুমতি, এবং অন্যান্য জটিলতার কারণে, সবচেয়ে সহজ এবং সাশ্রয়ী উপায় হল একটি ট্যুর অপারেটরের সাথে যাওয়া। প্যাকেজের মধ্যে শিপে উঠা থেকে শুরু করে ট্যুরের সমাপ্তি পর্যন্ত সমস্ত ব্যবস্থা, যেমন থাকার জায়গা, তিন বেলার খাবার, দুই বেলা হালকা নাস্তা, বন বিভাগের অনুমতি, নিরাপত্তারক্ষী ও গাইড সহ সকল খরচ অন্তর্ভুক্ত থাকে।
সুন্দরবন ভ্রমণ খরচ সম্পর্কে কিছু কথা
সুন্দরবন ভ্রমণ প্যাকেজের খরচ বিভিন্ন উপাদানের উপর নির্ভর করে, যেমন জাহাজের মান, খাবারের ধরণ, ভ্রমণের স্থল এবং ট্যুরের দৈর্ঘ্য। সাধারণ মানের শিপে ঘুরতে গেলে জনপ্রতি খরচ হতে পারে ৬,০০০ থেকে ১৪,০০০ টাকা। বিলাসবহুল টুরিস্ট ভেসেলে (AC Luxury Cruise Ship) ভ্রমণের জন্য খরচ বাড়বে, যা জনপ্রতি ১৫,০০০ থেকে ২৫,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। সাধারণভাবে প্যাকেজগুলি ২ রাত ৩ দিন বা ৩ রাত ৪ দিনের হয়। যদি আপনারা একসাথে ৩০-৪০ জন হয়ে থাকেন, তাহলে নিজেদের জন্য একটি লঞ্চ বা শিপ ভাড়া করে নিতে পারেন, যার খরচ নির্ভর করবে নির্বাচিত সার্ভিসের উপর।
সুন্দরবন কিভাবে যাবেন?
সুন্দরবনে পৌঁছাতে গেলে দুটি প্রধান পথ রয়েছে: খুলনা এবং মোংলা। খুলনা থেকে যাওয়ার ক্ষেত্রে, শিপগুলো মোংলা হয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করে। ঢাকা থেকে খুলনায় সরাসরি বাস অথবা ট্রেনে যাওয়া যায়। গুলিস্তান, সায়দাবাদ, এবং গাবতলী থেকে খুলনার নন-এসি বাসের ভাড়া ৬৫০-৭০০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৭০০-১৪০০ টাকা। ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ট্রেন সকালে এবং চিত্রা এক্সপ্রেস সন্ধ্যায় ছাড়ে, যার ভাড়া সিটের ক্লাস অনুযায়ী ৬২৫ থেকে ২১৬৮ টাকা।
মোংলা যেতে হলে, ঢাকা থেকে সরাসরি সেমি চেয়ার কোচ বাস রয়েছে, যেমন কমফোর্ট লাইন, দিগন্ত, রাজধানী এবং আরমান পরিবহন, যার ভাড়া ৪৫০-৫০০ টাকা। মোংলায় পৌঁছাতে চাইলে, খুলনা যাওয়া উচিত এবং সেখান থেকে কাটাখালীর মোড় নেমে বাস, মাহিন্দ্রা, সিএনজি অথবা বাইক ধরে ২৬ কিলোমিটার দূরে মোংলা যাওয়া যায়। খুলনায় গিয়ে সেখান থেকেও মোংলায় যাওয়া সম্ভব। বাসে ঢাকা থেকে খুলনা বা মোংলা যেতে প্রায় ৫ ঘণ্টা সময় লাগে, পদ্মা সেতু হয়ে।
সুন্দরবন ভ্রমণের খরচের ধারনা
যদি আপনি সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য ট্যুর এজেন্সির সাথে যান, তবে সাধারণত প্যাকেজের মধ্যে সকল ফি অন্তর্ভুক্ত থাকে, তাই আলাদা করে কিছু দিতে হয় না। তবে, যদি একদিনের সফর বা নিজে ম্যানেজ করে যান, তাহলে প্রতিটি স্থানীয় দর্শনীয় জায়গার জন্য আলাদাভাবে প্রবেশ ফি দিতে হবে।
অভয়ারণ্য এলাকায় দেশি পর্যটকদের জন্য দৈনিক ভ্রমণ ফি ১৫০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ৩০ টাকা, এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১৫০০ টাকা। অভয়ারণ্যের বাইরে দেশি পর্যটকদের জন্য ফি ৭০ টাকা, ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য ২০ টাকা, বিদেশি পর্যটকদের জন্য ১০০০ টাকা, এবং গবেষকদের জন্য ৪০ টাকা।
করমজলে দেশি পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ ফি জনপ্রতি ৪৬ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ৫৭৫ টাকা। অন্যান্য খরচের মধ্যে রয়েছে গাইডের জন্য দৈনিক ফি ৫০০ টাকা, নিরাপত্তা গার্ডদের জন্য ৩০০ টাকা, লঞ্চের ক্রুদের জন্য ৭০ টাকা, এবং টেলিকমিউনিকেশন ফি ২০০ টাকা। ভিডিও ক্যামেরা ব্যবহার করলে দেশি পর্যটকদের জন্য ২০০ টাকা এবং বিদেশি পর্যটকদের জন্য ৩০০ টাকা ফি দিতে হবে।
রাস পূর্ণিমার সময় তীর্থযাত্রীদের ৩ দিনের জন্য জনপ্রতি ফি ৫০ টাকা, নিবন্ধিত ট্রলারের জন্য ২০০ টাকা, অনিবন্ধিত ট্রলারের জন্য ৮০০ টাকা, এবং প্রতিদিন ট্রলারের জন্য ২০০ টাকা ফি প্রযোজ্য।
সুন্দরবন ভ্রমণে খরচ কমান
যদি কম খরচে একদিনে সুন্দরবন ঘুরে দেখতে চান, তবে মোংলা থেকে করমজল অথবা হারবাড়িয়া পর্টন কেন্দ্র ঘুরে আসা একটি ভালো বিকল্প। সকালে মোংলা থেকে রওনা দিলে আপনি একদিনেই দুটো স্থান ঘুরে দেখতে পারবেন। মোংলা ফেরী ঘাট থেকে সারাদিনের জন্য নৌযান ভাড়া পাওয়া যায়।
করমজল পরিদর্শনের জন্য নৌযান ভাড়া প্রায় ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা, এবং করমজল ও হারবাড়িয়া দুই জায়গা ঘুরতে ভাড়া পড়বে ৩৫০০ থেকে ৫০০০ টাকা পর্যন্ত। হারবাড়িয়া যেতে চাইলে ভালো মানের ট্রলার ভাড়া করার পরামর্শ দেওয়া হয়, এবং ভাড়ার ক্ষেত্রে দরদাম করা উচিত।
করমজল প্রবেশ টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ৪৬ টাকা, আর হারবাড়িয়ার প্রবেশ টিকেটের মূল্য ১৭২ টাকা। হারবাড়িয়ায় যাওয়ার জন্য সেখানকার অফিস থেকে অনুমতি ও গাইড নিতে হবে। দুপুরের খাবার মোংলা থেকেই নিয়ে যেতে হবে।
যদি কয়েকজন মিলে গ্রুপ করে ঢাকা থেকে ট্যুর প্ল্যান করেন, তাহলে আনুমানিক খরচ হবে জনপ্রতি ২৫০০-৩০০০ টাকা। শুধু করমজল ঘুরলে খরচ আরও কম হবে।
থাকবেন কোথায়
সুন্দরবন ভ্রমণের সময় থাকার ব্যবস্থা নিয়ে কিছু তথ্য:
লঞ্চ বা শীপে ভ্রমণ:
সুন্দরবনে লঞ্চ বা শীপে ঘুরলে সাধারণত সেখানেই থাকার ব্যবস্থা থাকে। এই ধরনের প্যাকেজের মধ্যে শীপের কামরা, খাবার, এবং অন্যান্য সুবিধা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
ব্যক্তিগত ভ্রমণ:
যদি আপনি ব্যক্তিগতভাবে সুন্দরবনে ঘুরতে যান, তাহলে কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় থাকার ব্যবস্থা রয়েছে:
- টাইগার পয়েন্টের কচিখালী: এখানে বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা পাওয়া যায়।
- হিরণপয়েন্টের নীলকমল: এখানে রেস্টহাউজ রয়েছে, যেখানে কিছু দিন থাকা সম্ভব।
- কটকা: বন বিভাগের রেস্টহাউজ রয়েছে।
মোংলা:
মোংলায় থাকার জন্য পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল পাওয়া যায়, যেখানে কিছু সাধারণ সুবিধা পাওয়া যায়।
পশুর বন্দর:
এখানে পর্যটকদের জন্য কিছু সাধারণ মানের হোটেল রয়েছে।
খুলনা:
খুলনা নগরীতে বিভিন্ন মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে, যেমন:
- হোটেল রয়েল
- ক্যাসেল সালাম
- হোটেল টাইগার গার্ডেন
- হোটেল ওয়েস্ট ইন
- হোটেল সিটি ইন
- হোটেল মিলিনিয়াম
সাতক্ষীরা:
সাতক্ষীরা শহরে কিছু সাধারণ মানের হোটেল পাওয়া যায়।
শ্যামনগর (মুন্সিগঞ্জ):
এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।
ভ্রমণ টিপস:
সুন্দরবনে ভ্রমণের সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখতে হবে:
মোবাইল নেটওয়ার্ক:
সুন্দরবনের বেশিরভাগ জায়গায় মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় না। কিছু কিছু স্থানে শুধুমাত্র টেলিটক নেটওয়ার্ক কাজ করে। তাই, নেটওয়ার্ক সমস্যার কারণে যোগাযোগের সমস্যা হতে পারে।
প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি:
- শীপে উঠার আগে: আপনার প্রয়োজনীয় সবকিছু সাথে নিয়ে উঠুন।
- খাবার পানি: নিরাপদ খাবার পানি এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সঙ্গে রাখুন।
- ঔষধ: প্রয়োজনীয় ঔষধও সঙ্গে নিতে ভুলবেন না।
ট্যুর এজেন্সি ও শীপ/লঞ্চ:
- এজেন্সির যাচাই: শীপ বা লঞ্চ বুকিংয়ের আগে সেই এজেন্সির সম্পর্কে বিস্তারিত জানুন।
- শীপের নিশ্চিতকরণ: কোন শীপ বা লঞ্চে নিয়ে যাবে তা আগেই নিশ্চিত করুন।
খরচ ও পরিকল্পনা:
- ছুটির দিন: বিশেষ ছুটির দিনগুলো এড়িয়ে চলুন যাতে খরচ কম হয়।
- আইডি কার্ড: সাথে ন্যাশনাল আইডি কার্ডের কপি রাখুন।
বাস্তবতার নিরীক্ষণ:
- লাক্সারী শীপ: বাজেটের সমস্যা না থাকলে লাক্সারী শীপে ভ্রমণ করতে পারেন।
- ট্যুর গাইড: ট্যুর গাইডের নির্দেশনা মেনে চলুন এবং অভিজ্ঞ ট্যুর অপারেটর নির্বাচন করুন।
নিরাপত্তা ও সতর্কতা:
- বনের অভ্যন্তরে নিরাপত্তা: বনে ঢুকার সময় একসাথে থাকুন এবং সুদক্ষ ও সশস্ত্র বন প্রহরী সাথে রাখুন।
- শীতকালীন প্রস্তুতি: শীতকালে যাওয়ার পরিকল্পনা থাকলে ভালো মানের শীতের কাপড় নিয়ে যান।
পরিবেশ রক্ষা:
- প্রকৃতির ক্ষতি: সুন্দরবনের প্রকৃতির ক্ষতি হয় এমন কিছু থেকে বিরত থাকুন।
এই বিষয়গুলো মনে রেখে সুন্দরবন ভ্রমণটি নিরাপদ ও আনন্দদায়ক হবে।
ভ্রমণ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করুন এবং আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।