সাজেক ভ্যালি এখন বাংলাদেশের ভ্রমণপ্রেমীদের অন্যতম প্রিয় গন্তব্যস্থল হয়ে উঠেছে। রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় অবস্থিত এই স্থানটি দেশের বৃহত্তম ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সাজেকের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও শান্ত পরিবেশ ভ্রমণকারীদের মন কেড়ে নেয়। যদিও এটি রাঙামাটি জেলার অন্তর্ভুক্ত, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা থেকে সাজেক পৌঁছানো তুলনামূলকভাবে সহজ। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার, আর দীঘিনালা থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে সাজেকের এই মোহনীয় পরিবেশে পৌঁছানো যায়।
কি দেখবেন
সাজেক ভ্যালিতে পা রাখলেই চারপাশের পাহাড়ি দৃশ্য আর মেঘের অসাধারণ সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। এখানে আপনি একদিনেই প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপের স্বাদ পেতে পারেন। কখনো গরম রোদের তাপ, কখনো হালকা বৃষ্টি, আবার কখনো ঘন মেঘের চাদরে সবকিছু ঢাকা পড়ে যায়—সব মিলিয়ে সাজেকের পরিবেশ যেন এক স্বপ্নময় জগতের মতো। পাহাড়ের উপর থেকে মেঘের খেলা দেখতে এবং প্রকৃতির সঙ্গে মিশে যেতে সাজেক ভ্যালি নিঃসন্দেহে এক আদর্শ স্থান।
সাজেক ভ্রমণের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো কংলাক পাহাড়ের অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য। সাজেকের শেষ গ্রাম কংলাক পাড়া, যেখানে লুসাই সম্প্রদায়ের মানুষের বসতি, সেই পাহাড় থেকে দেখা যায় কর্ণফুলী নদীর উৎস ভারতের লুসাই পাহাড়ে। রুইলুই পাড়া থেকে মাত্র দুই ঘণ্টার ট্রেকিংয়ে আপনি পৌঁছে যেতে পারেন কংলাক ঝর্ণায়, যাকে স্থানীয়রা পিদাম তৈসা বা সিকাম তৈসা ঝর্ণা নামে চেনে। এই ঝর্ণার ঠান্ডা পানির স্পর্শ আপনার ভ্রমণকে নিঃসন্দেহে আরও স্মরণীয় করে তুলবে।
সাজেক যেন প্রকৃতির এক অপরূপ ক্যানভাস, যেখানে প্রতিটি মুহূর্তই নতুন রূপে ধরা দেয়। দিনের বেলায় কিংবা রাতের আকাশে সাজেকের সৌন্দর্য কখনো ম্লান হয় না। ভোরের আলোয় মেঘের ভেলা আর সূর্যোদয়ের মায়াবী খেলা সবচেয়ে ভালো উপভোগ করা যায় হ্যালিপ্যাড থেকে। তাই ভোরবেলা উঠে সেখানে যাওয়া আপনার সাজেক ভ্রমণকে আরও মনোমুগ্ধকর করে তুলবে। বিকেলে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে সূর্যাস্তের লালিমায় মোড়া আকাশ যেন এক অন্য জগৎ। আর রাতের আঁধারে আকাশজুড়ে তারাদের আলো আর মিল্কিওয়ে বা ছায়াপথের মায়াময় দৃশ্য মন ছুঁয়ে যাবে।
সাজেক ভ্যালি ভ্রমণের সময় পাহাড়ি সৌন্দর্যের সাথে সেখানকার আদিবাসী সম্প্রদায়ের সহজ-সরল জীবনযাপন আপনাকে বিশেষভাবে স্পর্শ করবে। তাদের আন্তরিক অভ্যর্থনা আর সরল জীবনধারা মুগ্ধ না করে পারে না। সাজেক ভ্রমণ শেষে, যদি হাতে সময় থাকে, তাহলে ফেরার পথে আপনি হাজাছড়া ঝর্ণার ঠান্ডা পানিতে ভিজে যেতে পারেন। এছাড়াও দীঘিনালার ঝুলন্ত ব্রিজ আর বনবিহারও ঘুরে আসার মতো জায়গা, যা আপনার ভ্রমণকে আরও সমৃদ্ধ করবে, এনে দেবে নতুন কিছু অভিজ্ঞতার স্বাদ।
কখন যাবেন
সাজেকের সৌন্দর্য তুলনাহীন—এমন একটি স্থান, যা বছরের প্রতিটি মুহূর্তে আপনাকে মুগ্ধ করবে। সব ঋতুতেই সাজেক যেন প্রকৃতির এক অপরূপ ক্যানভাস, তবে বিশেষ করে বর্ষা এবং শরৎকালে, জুলাই থেকে নভেম্বরের মধ্যে, সাজেকের আকাশজুড়ে মেঘের খেলা দেখতে পাওয়া যায় বেশি। এই সময়ে মেঘ আর পাহাড়ের মাঝে লুকোচুরি খেলা যেন প্রকৃতির এক বিশেষ উপহার, যা সাজেক ভ্রমণকে সত্যিই স্মরণীয় করে তোলে।
সাজেক যাবার উপায়
সাজেক ভ্রমণে যেতে চাইলে প্রথমে খাগড়াছড়ি পৌঁছানোই সবচেয়ে সুবিধাজনক। যদিও সাজেক রাঙামাটি জেলার অংশ, খাগড়াছড়ির দীঘিনালা হয়ে সাজেকে যাতায়াত করা সহজ এবং জনপ্রিয় পথ। ঢাকা থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত সরাসরি বেশ কিছু বাস সার্ভিস রয়েছে। নন-এসি বাসের ভাড়া ৮০০-৯০০ টাকার মধ্যে আর এসি বাসের ভাড়া ১১০০-১৭০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। শান্তি পরিবহন সরাসরি দীঘিনালায় যায়, যার ভাড়া ৮০০-৮৫০ টাকা। ছুটির দিনে ভ্রমণের পরিকল্পনা করলে আগেভাগেই টিকেট কেটে নেওয়া ভালো, কারণ শেষ মুহূর্তে টিকেট পেতে অসুবিধা হতে পারে।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেকের দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার, আর ভ্রমণের জন্য সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো শাপলা চত্বর থেকে জীপগাড়ি, যা চাঁন্দের গাড়ি নামেও পরিচিত। সাজেক যাওয়া-আসা এবং দুই দিনের জন্য পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ৯,৫০০ থেকে ১০,৫০০ টাকার মধ্যে। এতে ১২ থেকে ১৫ জন যাত্রী আরাম করে ভ্রমণ করতে পারবেন। যদি দলের সদস্য সংখ্যা কম হয়, তাহলে অন্য কোনো দলের সঙ্গে শেয়ার করে গাড়ি নিতে পারেন, এতে খরচ অনেকটাই কমে যাবে। সিএনজি দিয়েও যাওয়া সম্ভব, যার ভাড়া ৪,৫০০ থেকে ৫,৫০০ টাকার মধ্যে। তবে পাহাড়ি রাস্তায় সিএনজি তুলনামূলকভাবে কম নিরাপদ, তাই জীপগাড়িই বেশি উপযুক্ত।
খাগড়াছড়ি থেকে সাজেক যাওয়ার পথে জীপ সমিতি ও পার্বত্য যানবাহন মালিক কল্যাণ সমিতি নির্ধারিত ভাড়া তালিকা
যাত্রার ধরণ | পিক আপ গাড়ি | জীপ (চাঁদের) গাড়ী |
দিনে দিনে ফিরে আসা (খাগড়াছড়ি – সাজেক – খাগড়াছড়ি) | ৮,০০০ | ৭,৫০০ |
সাজেক ১ রাত কাটানো | ১০,০০০ | ৯,৩০০ |
সাজেক ১ রাত কাটানো, আলুটিলা – রিসাং ঝর্ণা, তারেং, জেলা পরিষদ পার্ক | ১২,০০০ | ১০,৭০০ |
সাজেক ২ রাত কাটানো (খাগড়াছড়ি – সাজেক – খাগড়াছড়ি) | ১৩,০০০ | ১১,৫০০ |
সাজেক ২ রাত কাটানো, আলুটিলা, রিচাং ঝর্ণা ও ঝুলন্ত ব্রিজ সহ | ১৫,০০০ | ১৩,০০০ |
যদি আপনি একা ভ্রমণ করেন বা ২-৩ জনের ছোট একটি দল নিয়ে সাজেক যেতে চান, তবে খাগড়াছড়ির শাপলা চত্বর থেকেই সহজে অন্য ভ্রমণকারী দল খুঁজে পেতে পারেন। সেখানে থাকা ভ্রমণপ্রেমীদের সাথে কথা বলে জীপগাড়ি ভাগাভাগি করে সাজেক যাওয়া বেশ সুবিধাজনক। যদি তৎক্ষণাৎ কাউকে না পান, তবে শাপলা চত্বরে অবস্থিত জীপ সমিতির অফিসে যোগাযোগ করুন। তারা আপনার জন্য অন্য দলের সাথে শেয়ার করে ভ্রমণের ব্যবস্থা করে দেবে, যা খরচও অনেকটাই কমিয়ে দেবে।
খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালায় গিয়ে সাজেক ভ্রমণও একটি ভাল বিকল্প। খাগড়াছড়ি থেকে দীঘিনালার দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। এখানে পৌঁছাতে বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৪৫ টাকা, এবং মোটরসাইকেলে ভাড়া ১০০ টাকা। যদি আপনি মোটরসাইকেল রিজার্ভ করতে চান, তাহলে সেগুলোর সুবিধা এবং শর্তাবলি ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। দীঘিনালা থেকে সাজেক যাওয়ার জন্য এই ব্যবস্থাগুলি আপনার যাত্রা আরও সুবিধাজনক করতে পারে।
দীঘিনালায় পৌঁছানোর সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবেই যান না কেন, আপনাকে অবশ্যই সকাল ৯টা থেকে ৯টা ৩০ মিনিটের মধ্যে দীঘিনালা পৌঁছাতে হবে। এর পর থেকে বাকি পথ সেনাবাহিনীর এসকোর্টে যেতে হবে, যা নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয়। সেনাবাহিনীর এসকোর্ট দিনে দুটি সময় পাওয়া যায়: একবার সকাল ৯টা ৩০ মিনিটে এবং আরেকবার বিকেল ২টা ৩০ মিনিটে। যদি সকালের এসকোর্ট মিস করেন, তবে বিকেল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে, এবং বিকেলের এসকোর্ট মিস করলে পরের দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে। এসকোর্ট ছাড়া সাজেক যাওয়া সম্ভব নয়। তবে, যদি হাতে কিছু সময় থাকে, দীঘিনালা পৌঁছে হাজাছড়া ঝর্ণা ঘুরে দেখা যেতে পারে।
দীঘিনালা থেকে সাজেকের পথে আপনি বাগাইহাট, মাচালং বাজার এবং রুইলুই পাড়া পেরিয়ে পৌঁছাবেন সাজেকে। খাগড়াছড়ি শহর থেকে সাজেক পৌঁছাতে প্রায় দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগে। এই যাত্রা আপনার জন্য এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা হবে, কারণ রাস্তা আঁকাবাঁকা এবং উঁচু-নিচু পাহাড়ি পথ ধরে চলার সময় চারপাশের মনোরম পাহাড় আর সবুজের সমারোহ আপনাকে পথের ক্লান্তি ভুলিয়ে দেবে।
চট্রগ্রাম থেকে সাজেক ভ্রমণ : চট্টগ্রাম থেকে সাজেক ভ্রমণে যেতে হলে আপনি খাগড়াছড়ি বা দীঘিনালা হয়ে যেতে পারেন। চট্টগ্রামের কদমতলী থেকে বিআরটিসি এসি বাস সারাদিনে চারবার চলাচল করে, যার ভাড়া ২০০ টাকা। এছাড়া অক্সিজেন মোড় থেকে প্রতি ঘণ্টায় শান্তি পরিবহনের বাসও পাওয়া যায়, যার ভাড়া ১৯০ টাকা। সাধারণভাবে, চট্টগ্রাম থেকে বাসে খাগড়াছড়ি পৌঁছাতে ৪-৫ ঘণ্টা সময় লাগে।
রাঙ্গামাটি থেকে সাজেক ভ্রমণ : রাঙামাটি থেকে বাঘাইছড়ি ভ্রমণের জন্য আপনি নৌপথ অথবা সড়কপথ বেছে নিতে পারেন। রিজার্ভ বাজার লঞ্চঘাট থেকে প্রতিদিন সকাল ৭:৩০ থেকে ১০:৩০ পর্যন্ত লঞ্চ ছাড়ে, এবং বাঘাইছড়ি পৌঁছাতে সময় লাগে ৫-৬ ঘণ্টা। লঞ্চের ভাড়া জনপ্রতি ১৫০-২৫০ টাকা। অন্যদিকে, রাঙামাটি বাস টার্মিনাল থেকে সকাল ৭:৩০ থেকে ৮:৩০ এর মধ্যে বাস ছাড়ে, যাত্রার সময় ৬-৭ ঘণ্টা এবং ভাড়া জনপ্রতি ২০০ টাকা। এছাড়া, ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকেও সরাসরি বাঘাইছড়ি যাওয়া সম্ভব। বাঘাইছড়ি থেকে সাজেক ভ্যালিতে পৌঁছাতে আপনি জীপ (চাঁদের গাড়ি) অথবা মোটরসাইকেল নিতে পারেন, যার ভাড়া জনপ্রতি ৩০০ টাকা।
কক্সবাজার থেকে সাজেক ভ্রমণ: কক্সবাজার থেকে সাজেক ভ্রমণের জন্য খাগড়াছড়ি হয়ে যাওয়া সম্ভব। শান্তি পরিবহনের বাস কক্সবাজার থেকে খাগড়াছড়ি রুটে নিয়মিত চলাচল করে। প্রতিদিন রাত ৯টা এবং ১০টায় এই বাসগুলো খাগড়াছড়ির উদ্দেশে ছেড়ে যায়। নন-এসি বাসের ভাড়া জনপ্রতি ৫৫০ টাকা।
কোথায় থাকবেন
সাজেক ভ্যালিতে থাকার জন্য প্রায় শতাধিক রিসোর্ট ও কটেজের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রিসোর্ট বা কটেজের মান অনুযায়ী এক রাতের ভাড়া ১,৫০০ টাকা থেকে ১৫,০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। বিশেষত ছুটির দিনগুলোতে ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে মাসখানেক আগে বুকিং দিয়ে রাখা ভালো, অন্যথায় ভালো মানের রুম পাওয়া কঠিন হতে পারে। কম বাজেটে থাকতে চাইলে আদিবাসী কটেজগুলো একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। বর্তমানে সাজেকে পরিবেশের সাথে মানিয়ে নেওয়া নতুন নতুন কটেজও গড়ে উঠেছে, যা থেকে সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
সাজেকের রিসোর্ট ও কটেজ
সাজেকের অন্যতম জনপ্রিয় রিসোর্ট হচ্ছে সাজেক রিসোর্ট, যা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত। এখানে নন-এসি রুমের ভাড়া ১০,০০০ থেকে ১৫,০০০ টাকার মধ্যে হয়ে থাকে। রিসোর্টে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে এবং সেনাবাহিনীর কর্মরত সদস্য বা প্রথম শ্রেণীর সরকারি কর্মকর্তারা ডিসকাউন্ট সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। রিসোর্টে যোগাযোগ করতে চাইলে আপনি নিচের নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করতে পারেন: 01859-025694, 01847-070395, 01769-302370।
সাজেকে অবস্থিত রুন্ময় রিসোর্টে মোট ৫টি রুম রয়েছে, যেখানে প্রতিটি রুমে ২ জন করে থাকতে পারবেন। নিচ তলার রুমগুলোর ভাড়া ৪,৪৫০ টাকা এবং উপরের তলার রুমগুলোর ভাড়া ৪,৯৫০ টাকা। অতিরিক্ত বেডের জন্য ৬০০ টাকা খরচ হতে পারে। রিসোর্টে থাকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে: 0186547688।
মেঘপুঞ্জি রিসোর্টে রয়েছে চারটি কটেজ, প্রতিটি কটেজে সর্বোচ্চ ৪ জন অতিথি থাকতে পারবেন। সুন্দর ইকো ডেকোরেশন এবং মনোরম ল্যান্ডস্কেপিক ভিউ উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া যায় এখানে। কটেজগুলোর ভাড়া ৪,০০০-৪,৫০০ টাকা। রিসোর্টে থাকার জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে: 01815-761065।
রিসোর্ট রুংরাং সাজেকের অন্যতম সেরা রিসোর্টগুলির মধ্যে একটি। এখান থেকে দিগন্তজোড়া পাহাড়ের সৌন্দর্য এবং মেঘের উড়াউড়ি উপভোগ করা যায়। রিসোর্টটি নান্দনিক ইন্টেরিয়র ডিজাইনে সাজানো এবং এখানে ৪টি ডাবল বেড রুম এবং ৪টি কাপল রুম রয়েছে। ছুটির দিনে ডাবল বেড রুমের ভাড়া ৩,৫০০ টাকা এবং কাপল রুমের ভাড়া ২,৮০০ টাকা, অন্যদিকে অন্যান্য দিনগুলিতে ডাবল বেড রুমের ভাড়া ২,৮০০ টাকা এবং কাপল রুমের ভাড়া ২,০০০ টাকা। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে: 01884-710 723, 01869-649817।
ম্যাডভেঞ্চার রিসোর্টের প্রতিটি তলায় রয়েছে প্রশস্ত বারান্দা, এবং এখানে ২৪ ঘন্টা ইলেকট্রিসিটি ও পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে। রিসোর্টে প্রিমিয়াম কাপল রুমের ভাড়া ৪,০০০ টাকা, কাপল ক্লাসিক রুম ও ডাবল ক্লাসিক রুমের ভাড়া ৩,৫০০ টাকা। বুকিংয়ের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন এই নম্বরে: 01885-424242।
মেঘ মাচাং রিসোর্ট, সুন্দর ভিউ এবং সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য অনেকের প্রিয়। এখানে খাওয়া-দাওয়ারও ব্যবস্থা রয়েছে। পাঁচটি কটেজের মধ্যে ভাড়া ৩,৫০০ থেকে ৪,৫০০ টাকার মধ্যে। বুকিং ও অন্যান্য তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন: 01822-168877।
জুমঘর ইকো রিসোর্টে ৬টি কাপল রুম রয়েছে, যেখানে প্রতিটি কটেজে সর্বোচ্চ ৪ জন থাকতে পারে। কটেজগুলোর ভাড়া ৪,০০০ টাকা। বুকিং এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন: 01884-208060।
টিজিবি লুসাই কটেজ সুন্দর ডেকোরেশন এবং চমৎকার ল্যান্ডস্কেপিক ভিউয়ের জন্য পরিচিত। এখানে কাপল, ফ্যামিলি, এবং গ্রুপের জন্য বিভিন্ন ধরনের কক্ষ পাওয়া যায়, যেগুলোর ভাড়া ২,৫০০ টাকা থেকে ৪,৫০০ টাকার মধ্যে। বুকিং এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন: 01634-198005।
সাজেকের রুইলুই পাড়ায় অবস্থিত আলো রিসোর্টে ৬টি রুম রয়েছে, যার মধ্যে ৪টি ডাবল রুম (২টি বেডসহ) পাওয়া যায়। রুমগুলোর ভাড়া ১,০০০ থেকে ১,৫০০ টাকার মধ্যে। বুকিং এবং অন্যান্য তথ্যের জন্য যোগাযোগ করুন: 01841-000645।
যারা কম খরচে থাকার সুযোগ খুঁজছেন, তাদের জন্য আদিবাসীদের ঘর একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। এখানে জনপ্রতি ১৫০-৩০০ টাকায় থাকা যায়। যদিও এটি ফ্যামিলি বা কাপলের জন্য খুব একটা সুবিধাজনক নয়, তবে বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে একসাথে থাকার জন্য এটি আদর্শ হতে পারে।
আরও পড়ুন : সাজেকের সকল রিসোর্টের তথ্য গাইড
সাজেক এর খাওয়া দাওয়া
সাজেকে থাকা রিসোর্টগুলিতে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে, এবং আপনি আগেই জানালে আপনার পছন্দমতো রান্না করে দেওয়া হবে। প্রতিদিনের খাবারের খরচ জনপ্রতি ১০০-২৫০ টাকা হতে পারে, যেখানে সাধারণত ভাত, আলুভর্তা, মুরগির মাংস ইত্যাদি মেনু পাওয়া যাবে। চাইলে রাতে বারবিকিউয়ের আয়োজনও করতে পারবেন। আদিবাসী ঘরেও খাবারের ব্যবস্থা আছে, তবে আগে থেকে জানিয়ে দিলে তারা আপনার জন্য খাবার প্রস্তুত করবে। এছাড়া, সাজেকে সস্তায় পেঁপে, আনারস, কলা ইত্যাদি ফল পাওয়া যায়, তাই এগুলো উপভোগ করতে ভুলবেন না।
সাজেকে যাওয়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মনে রাখা জরুরি:
- বিদ্যুৎ সরবরাহ: সাজেকের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নেই, তবে বেশিরভাগ রিসোর্ট ও কটেজে সোলার পাওয়ারের ব্যবস্থা রয়েছে। বিদ্যুৎ সীমিত থাকায়, ফোন ও অন্যান্য ডিভাইস চার্জ করার জন্য একটি পাওয়ার ব্যাংক সঙ্গে রাখা ভালো।
- নেটওয়ার্ক সিগন্যাল: সাজেক ভ্যালিতে শুধুমাত্র রবি, এয়ারটেল, এবং টেলিটক নেটওয়ার্কের সিগন্যাল ভালো পাওয়া যায়।
- যাতায়াত সতর্কতা: সাজেক যাবার পথ অনেক আঁকাবাঁকা ও উঁচু নিচু। জীপের ছাঁদে ভ্রমণের সময় সতর্ক থাকা উচিত।
- গাইড প্রয়োজনীয়তা: সাজেক যেতে গাইডের প্রয়োজন নেই; নিজেই ঘুরে দেখতে পারবেন।
- ছবি তোলার অনুমতি: আদিবাসীদের ছবি তোলার আগে তাদের অনুমতি নিন। অনুমতি ছাড়া ছবি তোলা এড়িয়ে চলুন।
- আদিবাসীদের প্রতি আচরণ: আদিবাসী মানুষজন সহজ সরল। তাদের সাথে ভদ্র ব্যবহার করুন এবং তাদের কালচারের প্রতি সম্মান দেখান।
- রুম বুকিং: ছুটির দিনে ভ্রমণের পরিকল্পনা থাকলে, রুম মাস খানেক আগে বুকিং দিয়ে রাখুন। এতে করে ঝামেলা এড়াতে পারবেন।
- নিরাপত্তা বাহিনী: যাওয়ার পথে কিছু জায়গায় নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প রয়েছে। সেখানে ভ্রমণকারী সদস্যদের তথ্য জমা দিতে হতে পারে। নিরাপত্তার সার্থে তাদের সহযোগিতা করুন এবং সাথে করে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি রাখুন।
- গাড়ির ব্যবস্থাপনা: দুই তিন দিনের জন্যে গেলে গাড়ি বসিয়ে না রেখে, শুধু যাবার জন্য গাড়ি ঠিক করুন। ফিরে আসার সময় অন্য কোনো গাড়িতে ফিরে আসুন, অথবা দীঘিনালা থেকে ফোন করে গাড়ি পাঠিয়ে ফেরত আসতে পারবেন।
ভ্রমণ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করুন এবং আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।