জাতীয় চিড়িয়াখানা – বাংলাদেশ

ঢাকার মিরপুরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা জনসাধারণের বিনোদন এবং বন্যপ্রাণি সংরক্ষণে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। প্রাণি বৈচিত্রের সংরক্ষণ, প্রজনন, গবেষণা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথমে ১৯৫০ সালে ঢাকা হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে কিছু বন্যপ্রাণি নিয়ে এর যাত্রা শুরু হলেও, ১৯৭৪ সালের ২৩ জুন মিরপুরে বর্তমান চিড়িয়াখানা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

প্রায় ৭৫ হেক্টর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ বিশ্বের বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার। এছাড়া এখানে রয়েছে ১৯১ প্রজাতির দেশী-বিদেশী ২১৫০টি প্রাণী। চিত্রা হরিণ, নীলগাই, সিংহ, গন্ডার, ভালুক, এবং জলহস্তির পাশাপাশি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি যেমন পানকৌড়ি, ফ্লেমিংগো, মাছরাঙা দেখতে পাবেন।

চিড়িয়াখানার প্রাণি জাদুঘরেও রয়েছে প্রায় ২৪০ প্রজাতির স্টাফিং করা পশুপাখি। এছাড়া, এখানে ১৩ হেক্টর জায়গাজুড়ে দুটি লেক রয়েছে, যা প্রাণিদের জন্য প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি করে এবং দর্শনার্থীদের আনন্দদায়ক অভিজ্ঞতা প্রদান করে।

পরিদর্শনের সময়সূচি এবং প্রবেশমূল্য

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানা সাধারণত সপ্তাহের প্রতিদিন খোলা থাকলেও, প্রতি রবিবার এটি বন্ধ থাকে। তবে, যদি রবিবার কোনো সরকারি ছুটির দিন হয়, সেদিন চিড়িয়াখানা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। সময়সূচি ঋতুভেদে ভিন্ন হয়—গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল থেকে অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত এবং শীতকালে (নভেম্বর থেকে মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চিড়িয়াখানা খোলা থাকে, যাতে দর্শনার্থীরা প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় প্রবেশের জন্য দুই বছরের বেশি বয়সী সকল দর্শনার্থীর টিকেটের মূল্য ৫০ টাকা নির্ধারিত। তবে, চিড়িয়াখানার প্রাণী জাদুঘরে প্রবেশ করতে চাইলে আলাদা করে ১০ টাকা টিকেট কিনতে হবে। দুই বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য কোনো প্রবেশ ফি নেই। স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আইডি কার্ড দেখিয়ে টিকেট মূল্যের অর্ধেক দিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন, যা শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা।

বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার পিকনিক স্পট ভাড়ার জন্যে রয়েছে দুটি আলাদা ব্যবস্থা—উৎসব এবং নিঝুম। সারাদিনের জন্য উৎসব স্পট ভাড়া করতে খরচ হবে ১০,০০০ টাকা, আর নিঝুম স্পটের জন্য ভাড়া নির্ধারিত ৬,০০০ টাকা। এছাড়া, যানবাহনের জন্য পার্কিং ফি নির্ধারণ করা হয়েছে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে। বাস, ট্রাক, মিনিবাসের জন্য পার্কিং ফি ৪০ টাকা, মাইক্রোবাস, ট্যাক্সি, জীপ, প্রাইভেট কার ও পিক আপের জন্য ২০ টাকা, সিএনজি, টেম্পু, মোটরসাইকেলের জন্য ১০ টাকা এবং রিক্সা ও বাইসাইকেলের পার্কিং ফি মাত্র ২ টাকা।

যাবেন কিভাবে

বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে সহজেই জাতীয় চিড়িয়াখানায় যাওয়া যায়। শহরের বিভিন্ন স্থান থেকে চিড়িয়াখানাগামী বাস নিয়মিত চলাচল করে, যা আপনার যাত্রাকে করে তোলে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী। তবে যদি আপনি আরও আরামদায়ক উপায়ে যেতে চান, তাহলে ট্যাক্সি, সিএনজি কিংবা প্রাইভেটকার ভাড়া করে সরাসরি চিড়িয়াখানায় পৌঁছানোরও সুযোগ রয়েছে।

খাবেন কোথায়

চিড়িয়াখানার প্রবেশপথের আশেপাশে বেশ কিছু খাবারের দোকান রয়েছে, যেখানে চাইলে আপনি খাবার কিনে খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই খাবারের দাম সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত, যাতে পরে কোনো অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সম্মুখীন না হন।

ভ্রমণ সংক্রান্ত সব ধরনের তথ্য ও আপডেট পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজ ফলো করুন এবং আমাদের ফেসবুক গ্রুপে যোগ দিন।

বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে জানিয়ে দিন

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top