
কক্সবাজার কিভাবে গেলাম
কক্সবাজার যাওয়ার জন্য প্রথমে সকালের ফ্লাইটে কক্সবাজার যাই। সকাল-সকাল ঢাকার রাস্তা ছিল পরিষ্কার। এয়ারপোর্টে পৌঁছাতেই কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর বডিং পাস নিয়ে এবং সকল নিরাপত্তা চেকিং শেষ করে বাসে করে বিমানের কাছে যাই। বিমানে অনেক আতিথেয়তার মধ্যে আমরা পৌঁছে গেলাম কক্সবাজার। এয়ারপোর্ট থেকে সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম হোটেলে। হোটেল ভাড়া একটু দামাদামি করে নেওয়া ভালো।
কক্সবাজার ভ্রমণ
প্রথমেই চলে গেলাম কলাতলি বিচে। সমুদ্রের ঢেউ এবং ঢেউয়ের গর্জন এক অসাধারণ অনুভূতি দেয়।

এটা আমার প্রথম ভ্রমণ। সমুদ্র এসে এমন এক অপরূপ অনুভূতি হলো, যা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কলাতলি থেকে চলে গেলাম ঝরনা দেখার জন্য হিমছড়ি ইকোপার্কে। সিএনজি বা ইজিবাইক নিয়ে যাওয়া যায়। এখানকার বিশাল উঁচু-উঁচু পাহাড় দেখেই এক অদ্ভুত অ্যাডভেঞ্চারের অনুভূতি হয়। পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে অনেক সিঁড়ি ভেঙে উঠতে হয়, যা কষ্টসাধ্য। পাহাড় থেকে বিশাল সমুদ্রের গর্জন এবং অপরূপ দৃশ্য দেখা যায়।

এরপর হিমছড়ির প্রধান আকর্ষণ প্রাকৃতিক ঝরনা। প্রথম দিন সমুদ্রের লোনা পানিতে গোসল না করে ঝরনার পানিতে গোসল করাটাই উত্তম, আমি তাই করলাম। কী এক প্রাকৃতিক ব্যবস্থা—নিরবচ্ছিন্ন পানি পড়ছে। এই ঝরনা দেখে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় না করে থাকতে পারলাম না। ঝরনার পানিতে গোসল করে মনটাই ভালো হয়ে গেল।
তারপর চলে গেলাম এক থেকে দেড় কিলোমিটার দূরের ঝাউবন বা লাল কাঁকড়ার বিচ। মনে রাখতে হবে, সমুদ্রে যখন জোয়ার থাকে তখন বনের মধ্যে হালকা পানি চলে আসে। পানির মধ্যে দিয়ে হাঁটতে হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছিল। বিশাল ঝাউবন দেখে মন হারিয়ে যায় অজানায়। এই বনে এলে ক্লান্তি দূর হয়ে যায়। মনের সব ক্লান্তি ভুলে গিয়ে একদম ফ্রেশ হয়ে যায় মন। নিরিবিলি সময় কাটাতে লাল কাঁকড়ার বিচ সত্যিই অসাধারণ। বড় আকারের লাল কাঁকড়া শীতকালে বেশি দেখা যায়। এই বিচে প্যারাসেইলিং করা যায়। মুক্ত আকাশে নিচে বিশাল সমুদ্র—প্যারাসেইলিং-এর অভিজ্ঞতা অন্য লেভেলের।

তারপর আমরা গেলাম পাটুয়ারটেক বিচে। এই বিচ অসংখ্য সুন্দর পাথরে ঘেরা। পাশে বিশাল বড় পাহাড়। পাহাড়ের গা-ঘেঁষে এবং বিচের পাশ দিয়ে বাংলাদেশের সবচেয়ে সুন্দর রাস্তা মেরিন ড্রাইভ চলে গেছে। এখানকার পাথরের মধ্যে ঘুরতে এত ভালো লেগেছে যে মনে হচ্ছিল এখানেই থেকে যাই। এখান থেকে সূর্যাস্তের অপূর্ব দৃশ্য দেখা যায়।

পরে চলে যাই ইনানী বিচ। এই বিচে বিকেলে অনেক মানুষ আসে। সবাই সূর্যাস্ত দেখতে আসে। মনে হয় যেন সূর্যটা সমুদ্রের পানিতে মিশে গেছে। খুবই মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সত্যিই এই দৃশ্য দেখে আল্লাহর মহিমার কথা মনে পড়ে। এখানেই আমাদের প্রথম দিনের ভ্রমণ শেষ হয়।

পরের দিন আমরা আবার চলে যাই কলাতলি বিচে গোসলের জন্য। প্রায় সবাই সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ের সঙ্গে খেলা করে গোসল করছে। গোসলের জন্য তিনটা পয়েন্ট আছে—লাবণী, কলাতলি, এবং সুগন্ধা পয়েন্ট। একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব প্রায় এক থেকে দেড় কিলোমিটার। আমরা প্রথমে তিনটি পয়েন্ট পায়ে হেঁটে ঘুরি। অনেক মানুষ ছিল। এত মানুষ দেখে ভ্রমণের আনন্দ যেন শতগুণে বেড়ে যায়। তিনটি পয়েন্ট ঘুরে আমরা কলাতলি পয়েন্টে গিয়ে গোসল করি।

কক্সবাজারে এসে শি-ফুড খাবেন না, তা কি হয়? সুগন্ধা বিচের পাশেই শি-ফুড মার্কেট। মনে রাখতে হবে, এই মার্কেটে শুধু রাতেই আসতে হবে। দিনে শি-ফুড পাওয়া যায় না। কক্সবাজারের প্রধান আকর্ষণই এই শি-ফুড। দাম বেশি চাইবে, দামাদামি করে কিনবেন সবসময়।

পরের দিন স্পিডবোটে করে মহেশখালী যাই। এটি বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়বেষ্টিত দ্বীপ। উত্তাল সমুদ্রে স্পিডবোটে চড়ার এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। মহেশখালীর রাখাইন পল্লি থেকে হাতের তৈরি নানা রকমের পোশাক কিনতে পারবেন। এখানকার মানুষ খুব আন্তরিক। এখানে আছে অসাধারণ শৈল্পিক দৃষ্টি নন্দন আদিনাথ এবং স্বর্ণ মন্দির। এই নান্দনিক সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে।

মহেশখালী থেকে ফিরে আমরা যাই শুঁটকি পল্লিতে। কলাতলি পয়েন্ট থেকে এর দূরত্ব ৪-৫ কিলোমিটার। বিশাল শুঁটকি পল্লি দেখে আপনি মুগ্ধ হবেন।

তৃতীয় দিন আমরা যাই বার্মিজ মার্কেটে। এখান থেকে ভ্রমণকে স্মরণীয় করতে বিভিন্ন শো-পিস, বার্মিজ আচার, চকলেটসহ নানা জিনিস কিনতে পারবেন।

যানবাহনের মধ্যে পাবেন চাঁদের গাড়ি, সিএনজি, টমটম, এবং ইজিবাইক। অবশ্যই দর কষাকষি করে নেবেন। বিচে বিভিন্ন রাইডের জন্যও দরদাম করে নেবেন।
ধন্যবাদ সবাইকে। সবার যাত্রা আরামদায়ক হোক।